ডেস্ক রিপোর্ট : পরিকল্পিত বনায়ন এবং সেই সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব অন্যান্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে রাজশাহী মহানগরীর বায়ুদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।নগরকর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মহানগরীর এখনকার পরিবশেন গত ক’বছর আগের তুলনায় অনেক বেশী পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ।‘রাউন্ড দ্য ক্লক এয়ার মনিটরিং স্টেশন’ এ সংগৃহীত ডাটার উদ্ধৃতি দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, নগরীর বাতাসে বৃহত্তর বস্তুকণা (পিএম) দ্বারা দূষণের মাত্রা ২০১৪ সালে প্রতি ঘণ মিটারে ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়ে ২০১৬ সালে ৬৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়ায়, অপর দিকে একই সময়ে ছোট বস্তুকণার পরিমাণ প্রতি ঘণ মিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম থেকে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ৩৭ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়ায়।

রশীদ বলেন, নগরীর বাস ও কারগুলো দ্রুত সিএনজিতে রূপান্তরিত করে ফেলা এবং অটোরিকসাগুলো ব্যাটারি চালিত হওয়ায় বায়ু দূষণের হার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, সাফল্যটি নীরবে এসেছে কারণ, আমরা বৃক্ষরোপণের দিকে আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ রেখেছি, যা অন্যন্য বিষয়ের সঙ্গে মিলে বায়ু থেকে ক্ষতিকারক কণাগুলিকে পরিষ্কার করে ফেলেছে।মেয়র বলেন, ‘আমরা নিজেরা প্রায় ১০ কিলোমিটা সড়ক জুড়ে ৫ হাজারেরও বেশী গাছ লাগিয়েছি এবং ফল বাগান করার জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করেছি। করপোরেশন বৃক্ষরোপণের জন্য ২০০৯, ২০১১, ২০১১ এবং ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করে বলে তিনি জানান।

মেয়র বুলবুল বলেন সবুজ গাছের আবরণে সমস্ত মাটি ঢেকে দেয়ার লক্ষে আমরা এখনও ‘জিরো সয়েল’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি এবং এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রায় ১২ শতাংশ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে স্কুলের ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে ২০ হাজার নিম গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।আগে পদ্মা নদী থেকে ধুলোবালি উড়ে এসে নগরীর বাতাস দূষিত করতো, কিন্তু এখন আমরা নদীর তীরে পার্ক নির্মাণ করেছি এবং চরগুলি কাশবন, ঘাস, ফসল ও গাছপালা লাগিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, ডিজেল বা পেট্রোল চালিত যানবাহনের পরিবর্তে নগরীর রাস্তায় এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এবং গ্যাস চালিত যানবাহন চলাচল করায় কার্বন নির্গমনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ট্রাকের মত ভারী যানবাহন দিনের বেলা নগরীরর রাস্তায় চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না।

বুলবুল আরও বলেন, কর্পোরেশনটি রাস্তাঘাটের পাশের উন্মুক্ত মাটি ফুটপাত নির্মাণ করে ঢেকে দিচ্ছে, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে, আম বাগানের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নির্মাণের জন্য পাদদেশ নির্মাণ করছে।
আরসিসি’র গৃহস্থালী ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য রাতের বেলা অপসারণ করে তা যথযথ স্থানে নিষ্কাশন করার বর্তমান ব্যবস্থাও পরিবেশ দূষণ রোধ করে পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।এ ব্যাপারে চিফ কনজারভেন্সি অফিসার শেখ মামুন বলেন, ‘সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণেরও জন্য আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা রয়েছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, যদি কেউ বিমান থেকে বা কোন বহুতল ভবনের ওপর থেকে লক্ষ্য করেন তবে তার চোখে রাজশাহী মহনগরী এবং এর আশেপাশের এলাকার ক্রমবর্ধমান সবুজায়নের ছবিটি ধরা পড়বে।

কিন্তু মাত্র ক’বছর বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন পদ্মা নদীর দিক থেকে ধেয়ে আসা গ্রীষ্মকালে ধুলি ঝড়ের ফলে নগরবাসীর কাছে তাপদাহ আরো দুঃসহ হয়ে উঠতো এবং বাধ্য হয়ে তাদের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হতো। সেই সঙ্গে মাঠ-ঘাট-রাস্তা থেকে আসা ধুলা এবং ইট ভাটা ও গাড়ির ঘন কালো ধোঁয়া তাদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিতো।
অধ্যাপক জামান বলেন, এই উদ্যোগ বর্তমান ও ভবিষ্যত উভয় প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ এবং খনি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ারার জাহান বলেন, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও ইট-ভাটার সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও রাজশাহী নগরীর বায়ু দূষণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে এই খবর খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।

তিনি বলেন, গত ১০ থেকে ১২ বছরে ব্যাপক বনায়ন, ব্যাটারি চালিত যানবাহনের প্রবর্তন, সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং ইটের ভাটার চিমনির উচ্চতা বাড়ানোর ফলে তা নগরীর দূষণের মাত্রা হ্রাসের ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া নগরীতে তেমন কোন বড় শিল্পকারখানা নেই, তাই তার পরিবেশে কোন হুমকি নেই।রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মতো অন্যান্য সরকারি সংস্থাও এই মহানগরীতে সবুজায়নের কাজ করছে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে