সোহেল রানা, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন।শুক্রবার সকালে ৩১ বার তোপধ্বন্নীর মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়।

সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদিতে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হয় । এতে অংশ গ্রহন করেন উপজেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংগঠন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ।

এরপর সকাল সাড়ে সাড়ে ৮ টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডঃ লায়েব উদ্দিন লাভলু , নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার ও বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন। এরপর উন্মুক্ত আকাশে রঙিন বেলুন ওড়ানো হয় । এতে শরিক হন বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ। এর আগে শহীদদের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অত:পর শুরু হয় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে।

বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আজ ১৬ ডিসেম্বর, গৌরবোজ্জল মহান বিজয় দিবস।
লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। বিশ্বের বুকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০ বছর পার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

অপর দিকে সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, মহান বিজয় দিবস সিনিয়ে আনার লক্ষে জীবন উৎসর্গকারী লাখো শহীদদের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা জানায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতা সহ শহীদ বুদ্ধিজীবিদের প্রতি।এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ, বাঘা উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষক মন্ডলী ও এলাকার সুধীজন-সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ, মহান বিজয় দিবস। এইদিনে রমনা রেসকোর্স ময়দানেসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতি বিজড়িত দিনের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে