hamidur-rahman

ডেস্ক রিপোর্টঃ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও দোয়া মাহফিল।

১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। সাতজন বীর শ্রেষ্ঠের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হামিদুরের পিতা আব্বাস আলী মন্ডল ও মাতা মোসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা।

শৈশবে খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন হামিদুর। ১৯৭০ সালে সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে যোগ দেন তিনি৷ তার প্রথম ও শেষ ইউনিট ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট৷

হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর চারটায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না।

অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন।

ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করেন। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়।

২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করেন এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় সিপাহী হামিদুর রহমানকে। ঝিনাইদহে তার নামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ ঝিনাইদহ সদরে রয়েছে একটি স্টেডিয়াম৷ ১৯৯৯ সালে খালিশপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি কলেজ৷ কিন্তু এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি তার নিজ গ্রামটির নাম হামিদনগর করা হোক।

স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালের ৯ মার্চ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্মৃতি জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টর কমান্ডার বীরউত্তম (অব.) মেজর জেনারেল সি আর দত্ত।

জাদুঘর উদ্বেধনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল খোদ্দ খালিশপুর গ্রামের নাম হামিদনগর ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত তা কাগজে কলমে কার্যকর হয়নি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হামিদুর রহমানের নামে আজ একটি ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ ও জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে