সিরাজগঞ্জ থেকে,মারুফ সরকারঃ সিরাজগঞ্জের বাহুকায় নির্মাণাধীন নদীতীর রক্ষা বাঁধের ভাঙন নিয়ন্ত্রণ দু’দিনেও করা সম্ভব হয়নি। ওই স্থান দিয়ে প্রবল বেগে নদীর পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।ঠিকাদারের গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাহুকা বাধেঁর ধসের কারণ হিসাবে এলকাবাসী অভিযোগ করেন।সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের ১নং নারী সদস্য, থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসরিন ইসলাম তালুকদার জানান, পাউবো গত মে মাসের শুরুতে ২ কি.মি. রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শামীম কনস্ট্রাকশন।

কিন্তু কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গড়িমশি এবং পাউবো কর্তৃপক্ষের উদাশীনতাকেই দায়ী করেন।এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর একজন সদস্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পাউবোর অদক্ষ শ্রমিকদের গাফলতিতে আমাদের প্রায় ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। প্রবল স্রোতের ভিতরে একটি নৌকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নব্যনির্মিত পাইলিং এ আঘাত করার সাথে সাথে গাছপালাসহ এই অংশ ভেঙে যায়। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধ করা যাবে।ভাঙন রোধে মেজর মোঃ সাইফুল হক (পিএসসি) এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ১১ রিভার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়নের ৪৫ জনের একটি টিম রাত জেগে কঠোর পরিশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন।সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত বাঁধের ভাঙন অংশে দুইটি নৌকা দিয়ে পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে বাঁধের পাইলিং, বালি ভরতি জিওব্যাগ ও প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কিন্তু বিকালে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় স্রোত বেড়ে নৌকাসহ ভাঙন স্থানের একটি বড় অংশ আবার পানির তোড়ে ভেঙে যায়।তিনি বলেন, ২০ মিটার ভাঙন স্থানের মধ্যে বর্তমানে নয় মিটার দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। সংস্কার কাজ চলছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র তিনঘণ্টার মধ্যে যমুনার প্রবল স্রোতে অন্তত ১০টি বাড়ী-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায় এবং প্লাবিত হয়ে পড়ে বাহুকা, চিলগাছা, ইটালী, ভেওয়ামারা ও গজারিয়াসহ রতনকান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, বাহুকা উচ্চ বিদ্যালয়, রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ।

এছাড়াও ৩০-৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আতঙ্কিত লোকজন আসবাপত্র নিয়ে বাড়ীঘর ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধ ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে।জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল ও সদর উপজেলার বাঁধ ভাঙন মিলে জেলায় প্রায় ২০০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে