badal-mehedi

বায়ান্নর মেয়ে একাত্তরে এসে
বাদল মেহেদী

বায়ান্নয় যে মেয়ে মিছিলে ছিলো
একাত্তরে তার হাতে অস্ত্র দেখেছি
উচ্চবিলাসী এক জ্যোতিষী বলে;
এ মেয়ের কপালে রাজটিকা আছে
একদিন সে ক্ষমতায় যাবে।

বায়ান্নয় যে মেয়ে কবিতা লেখে
একাত্তরে তার চোখে আগুন দেখেছি
হাতের কলম হলো অগ্নিমশাল
একা একাই লিখে গেছে মুক্তির গান
সে মেয়ের চোখে এখন ধূসর ছবি।

বায়ান্নয় যে মেয়ে জন্ম নিলো
একাত্তরে তারে আমি যুবতি দেখেছি
পাক সেনারা তার সম্ভ্রম কেড়ে নেয়
তবুও সে মেয়ে স্বাধীনতা চায়
পেয়েছে কী মেয়ে তার স্বাধীনতা আজো?
যদিও পেয়েছে বীরাঙ্গনা নামে খ্যাতি।

একাত্তরের বধ্যভূমি 

বাদল মেহেদী

খুঁজে দেখ একাত্তরের বধ্যভূমি পেয়ে যাবে আমার যৌবন
অস্থিগুলোয় পেয়ে যাবে শৈশবের ঘ্রাণ
খুঁজে দেখ পেয়ে যাবে পৃথিবীর আরেক সমৃদ্ধ জগত
মহাস্থানগড়ের মতো আরো এক সভ্যতা
পেয়ে যাবে মৌলিক চিন্তার মানুষ
তোমার পূজনীয় শিক্ষক; নির্ভীক সাংবাদিক;
বিশিষ্ট ডাক্তার; ইঞ্জিনিয়ার; দেশপ্রেমিক যুবক
সবাইকে গাদাগাদি করে পাবে ছোট্ট ঐটুকুন জায়গায়
কাদামাটির বুদবুদ ফুঁড়ে
ঐতো তাদের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে।

এটাকে তোমরা আর বধ্যভূমি বলো না
এ আমার জাতির পুণ্যভূমি
এখানে যারা আছে সবাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান
ওরা বারবার আসে : ওদের পুনর্জন্ম হয়
ওদেরকে হত্যা করলে ওরা আবার জেগে ওঠে
মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়।

বাংলার মাটি বধ্যভূমি হবে
শুধু ঐসব দেশদ্রোহী রাজাকার আর আলবদরদের জন্যে
যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো ঊনিশ ‘শ একাত্তরে।

স্বপ্ন কাহিনী 

বাদল মেহেদী

মেয়েটির চোখে স্বপ্ন ছিল – ঘর বাঁধার স্বপ্ন
ছেলেটির চোখে স্বপ্ন ছিল – দেশ শত্রুমুক্ত করার স্বপ্ন
ছেলেটি তার স্বপ্নের কথা মেয়েটিকে বলে
মেয়েটির মন কেঁদে ওঠে ভয় আর অজানা শঙ্কায়
ছেলেটি আশ্বাস দেয় – তুমি অপেক্ষায় থেকো
দেশ শত্রুমুক্ত হলে আমি আবার ফিরে আসবো
মেয়েটি অপেক্ষায় থাকে – একদিন -দুদিন -তিনদিন
দেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যের খবরে
মেয়েটির দিন কাটে স্বপ্ন দেখে।

একদিন জলপাই রঙ -এর একটি জিপগাড়ি আসে
মেয়েটির বাড়ির দরজায়
উর্দিপরা লোকগুলো ছেলেটির খোঁজ করে
ওকে না পেয়ে মেয়েটিকেই তুলে নিয়ে যায়।

দেশ স্বাধীন হলে ছেলেটি ফিরে আসে
ওর স্বপ্ন পূরণ হয়
মেয়েটি কিন্তু কোনদিনও আর ফিরে আসে না
ওর স্বপ্নগুলো কান্না হয়ে
বাংলার আকাশে বাতাসে মিশে আছে।

যে কষ্ট বয়ে বেড়াই 

বাদল মেহেদী

আমার মাস্টার মশাইকে আমি বাঁচাতে পারি নি
সে কষ্ট আমি আজো বয়ে বেড়াই
সেদিন আমার হাতে কোন অস্ত্র ছিল না
অস্ত্র ছিল পাকিস্তানি সেনাদের হাতে
নিরস্ত্র মাস্টার মশাইকে ওরা ধরে নিয়ে যায় তাদের ক্যাম্পে
সেখানে চলছিল মুক্তিকামী বাঙালি নিধনের এক মহাযজ্ঞ।

মাস্টার মশাইকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে
আমিও চলে যাই মুক্তাঞ্চলে
অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পেয়ে আবার ফিরে আসি
অন্যসব মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে।

আমাদের যুদ্ধ ছিল অসম
কিন্তু আমাদের সাহস ছিল অসীম অদম্য
নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা
পরাজিত হয় আমাদের অসীম সাহসের কাছে
জন্ম হয় মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের।

কিন্তু আমার মাস্টার মশাই কান্তি রায়
তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে পাননি
মাস্টার মশাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়
টাঙ্গাইল জেলা সদরের এক গণকবরে
পরাজিত হওয়ার আগে পাকিস্তানি সেনারা
তাকে হত্যা করে সেখানে ফেলে রাখে।

যুদ্ধের আগে মাস্টার মশাই বলতেন;
স্বাধীনতা পেতে হলে রক্ত দিতে হয়
সেদিন মুক্তিকামী মাস্টার মশাইয়ের মতো
আরো অনেকের রক্তের বিনিময়ে
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে

আজ আমার মাস্টার মশাই কান্তি রায় বেঁচে নেই
কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেছে আমার হৃদয় গভীরে।

ছকে বাঁধা জীবন

বাদল মেহেদী

আমার সময়গুলো এখন ছকে বাঁধা
ঘড়ির কাঁটা ঠিক ঠিক বলে দেবে
আমি কখন কী করবো।

একসময় ছকগুলো এলোমেলো ছিল
কারণ তোমার অনুরোধ রাখতে গিয়ে
আমি ছক মিলাতে পারিনি

তুমি প্রজাপতির মতো উতাল হাওয়ায়
ভেসে বেড়াতে আমাকে নিয়ে
জাফলং এর পানিতে সাঁতার কাটবে বলে
আমাকে জোর করেই নিয়ে গেলে
মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে
তুমি প্রায় মরতেই বসেছিলে
ভাগ্যিস আমি সাঁতার শিখেছিলাম।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমার হাতে রাইফেল দেখে
তুমি বলেছিলে; কোন নির্দোষ মানুষ মেরো না
আমি তোমার কথা মনে রেখে
শুধু কতকগুলো পাকিস্তানি সেনা আর
বিশ্বাসঘাতক নরপশু হত্যা করেছিলাম।

যুদ্ধ শেষে আমার হাতে ছিল
সদ্য স্বাধীন দেশের লাল -সবুজ পতাকা
খুব ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেখানোর
কিন্তু পারি নি
তুমি ততদিনে ঐসব নরপশুদের হাতে
নির্যাতিতা হয়ে বধ্যভূমিতে স্থান পেয়েছ।

অনেকগুলো বধ্যভূমি ঘুরে
অবশেষে যেদিন তোমার নিষ্প্রাণ দেহের সন্ধান পেলাম
সেদিন থেকে আমি বদলে গেছি।

এখন আমার জীবন ছকে বাঁধা
ঘড়ির কাঁটা ঠিক ঠিক বলে দেবে
আমি কখন কী করবো।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে