শ্রী মিশুক চন্দ্র ভুইয়া, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দশমিনায় টেস্ট পরীক্ষার ফিসের টাকা পরিশোধ না করায় শিক্ষকের বকাঝকা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে এক দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার আরজবেগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আরজবেগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক প্রয়াত গোপাল চক্রবর্তীর ছেলে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় চক্রবর্তী। অর্থাভাবে বিদ্যালয়ে চলা টেস্ট পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কাওসার তাকে বকা দেন এবং তথ্য ও যোগাযোগ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি।

এ ঘটনার অপমান সইতে না পেরে লজ্জা ও অভিমানে তন্ময় বিদ্যালয়ে বসেই বিষপান করেন। তন্ময়ের বিষপানের কিছুক্ষণ পর তাকে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সুস্থতার চেষ্টা করা হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে তন্ময়কে বিদ্যালয়ের কর্মচারী মো. জামাল ও হেমায়েত হোসেন একটি আটোগাড়িতে করে দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

দশমিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তন্ময়কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বিকেলে তন্ময় পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা যান।

তন্ময়ের মা জয়ন্তী চক্রবর্তী জানান, আমার ছেলে আজকে বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে বিদ্যালয়ের মরিয়ম ম্যাডাম ছেলেকে পরীক্ষার খাতা দেননি, তিনি আমার ছেলেকে বলেছেন আগে প্রধান শিক্ষকের থেকে অনুমতি নিয়ে আয় তার পরে খাতা দেবো। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুমতি আনতে গেলে তিনি আমার ছেলেকে বিদ্যালয়ের সব টাকা পরিশোধ না করলে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে বকাঝকা করে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন।

তন্ময়ের চাচাতো বোন ও একই ক্লাসের শিক্ষার্থী লাবনী চক্রবর্তী জানান, আমরা পরীক্ষার হলে ছিলাম তখন তন্ময় মরিয়ম ম্যাডামের কাছে খাতা চাইলে তিনি খাতা না দিয়ে অনুমতি নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কাওসার মুঠোফোনে জানান, ওর বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তাই কোনো দিন ওর কাছ থেকে আমরা টাকা পয়সা নেইনি। ছেলেটি নেশায় আসক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীটি আজকের পরীক্ষায় কেন অংশ নেয়নি এবং বিদ্যালয়ে বসে কেন বিষপান করল এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়ার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

দশমিনা থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাটি জেনে পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। তন্ময়ের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে