ডেস্ক রিপোর্ট  : জেলায় দেশি গরুর চাহিদা দিন দিন বেড়েছে। দেশিয় পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা গরু মোটাতাজা করে তাই এ জেলার গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরুর মাংসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারি ও কৃষকেরা গরু মোটাতাজা করে। গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৮ হাজার গরু বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। আর এবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত সাড়ে ৯ হাজার গরু জেলার বাইরে বিক্রি করতে পারবে বলে জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানাগেছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সুত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নড়াইলের কৃষক ও খামারিরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে। গত বছর মোট ২৯ হাজার পশু মোটাতাজা করেছিলেন জেলার খামারিরা। যার মধ্যে প্রায় ২১ হাজার গরু , ৮ হাজার ছাগল ও ৮টি ভেড়া। আর চলতি বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে জেলায় বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার গরু ও ছালগ মোটাতাজা করছে জেলার খামারি ও কৃষকেরা। যার মধ্যে প্রায় ২২ হাজার গরু, ৮ হাজার ৩শ ছাগল। প্রতিবারের ন্যায় এবছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর জেলায় প্রায় ১ হাজার গরু ও ২শ ছাগল বেশি মোটাতাজা করছে। গত বছর ভারত গরু আমদানি কম করায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি। তাই জেলার গরু খামারিরা ভাল লাভ করেছে। চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গত বারের তুলনায় আরও বেশি গরু মোটাতাজা করছে। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারন কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে একটি দুটি করে গরু মোটাতাজা করছে। বর্তমানে জেলায় মোট রেজিস্ট্রিকৃত গরুর খামার রয়েছে ৩৫৫টি ( কোন কৃষকের তিনটি গরুর বেশি থাকলে একটি খামার ধরা হয় )। যার মধ্যে নড়াইল সদরে ২০৭টি লোহাগড়ায় ৯৬ টি এবং কালিয়ায় ৯৪টি।
জেলার খামারিরা কোরবানিকে সামনে রেখে এসব গরু মোটাতাজা করে। গত বছর জেলায় কোরবানির গরুর চাহিদা ছিল প্রায় ১২ হাজার এবং ছাগলের চাহিদা ছিল সাড়ে ৫ হাজার। সে হিসেবে জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১২ হাজার পশু (গরু ও ছাগল) বেশি মোটাতাজা করেছিল। আর এসব গরু বিভিন্ন জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়েছে। জেলা পশু অফিসের হিসেবে অনুযায়ী এবছর জেলায় কোরবানি গরুর চাহিদা হবে সর্বপরি ১৪ হাজার ও ছাগলের চাহিদা হবে ৬ হাজার। অর্থাৎ জেলার চাহিদার চেয়ে তিনটি উপজেলায় মোট ৮ হাজারের বেশি গরু ও ৩ হাজার ছাগল মোটাতাজা করছে জেলার কৃষকেরা। অর্থাৎ এবছর জেলার চাহিদা থেকে ১১ হাজার বেশি পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সুত্রে জানাগেছে, দেশিয় পদ্ধতিতে চাষিরা গরু মোটাতাজা করেন তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। আকার ভেদে গত বছর প্রতিটা গরু ৩০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে এখানকার চাষিরা। গড়ে প্রতিটা গরু ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও গত বছর ২১ হাজার গরু প্রায় ৯৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর এবছর ২২ হাজার গরু প্রায় ৯৯ কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইল সদরের মির্জাপুর, চাকই, সিংগাশোলপু, গোবরা, কমখালি, শাহবাদ, সিমানন্দপুর, জুড়–লিয়া লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, চাচই, কোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, মল্লিকপুর, মাকড়াইল, লাহুড়িয়া। কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, মহাজন, টোনা, খাশিয়াল, বাবরা, গ্রামের কৃষক ও খামারিরা অন্যন্য এলাকা থেকে বেশি গরু মোটাতাজা করছে। জেলায় মোট যে গরু মোটাতাজা করা হয় তার ৩৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৬৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে জেলার সাধারন কৃষকেরা। প্রতিটি কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দুটি করে মোটাতাজা করন গরু রয়েছে। আর এসব গরু কোরবানিকে সামনে রেখে মোটাতাজা করছে তারা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের শুরুতে দেশি প্রজাতির প্রতিটি বাছুর ১২-১৫ হাজার টাকায় কিনে পালন করতে থাকে। সারা বছর খাবার হিসেবে কাজের ফাঁকে বিল থেকে কাচা ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো হয় এবং ঈদের ২ মাস পূর্বে খড়, খৈল, কুড়া, ও ভুষি খাওয়ানো হয়। বছরে যে খাবার লাগে অধিকাংশ খাবারই বিলের কাচা ঘাস। এই ঘাস কিনা লাগে না তাই খরচ অনেক কম হয়। একটি বাছুর ১২-১৫ হাজার টাকায় কিনে সারা বছর পোষার পরে ঈদের সময় আকার ভেদে ৪০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কৃষকেরা প্রতিটি গরু থেকে বছর শেষে আকার ভেদে ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করে।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এসব হাটে নগদ টাকায় গরু বিক্রি করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট ৪টি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট ও পুরুলিয়া গরুরহাট। এখানে বিভিন্ন জেলার বেপারিরা এসে এখানকার গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে। বর্তমানে এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা)।
খামারিরা জানান, গত বছর দেশের বাইরে থেকে বিদেশি গরু নড়াইলের কম এসেছিল। তাই দেশি গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। আমরা খামারিরা ও স্থানীয় কৃষকেরা নিজেদের গরু ভাল দামে বিক্রি করতে পেরেছি। লাভ খুব ভাল হয়েছিল।
নড়াইল সদরের মির্জাপুর এলাকার কৃষক আমিনউদ্দিন শেখ জানান, আমি গত বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ২টি বাছুর ৩৮ হাজার টাকায় কিনে ১১ মাস পালন করে কোরবানির আগে ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম। খরচ বাদে আমার ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবছর আমি ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি এড়ে বাছুর কিনে পালন করছি। গরু অনেক বড় হয়ে গেছে। আশা করছি কোরবানি সামনে রেখে ৪টি গরু ৩লক্ষ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবো।
নড়াইল জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৫/৬ বছর আগে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করত। সে সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকেরা গরুর নায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হয়েছে। তাই এবছর অনেক কৃষক গরু মোটাতাজা করতে আগ্রহী হয়েছে। আমরা সরকারি ভাবে তাদেরকে ৪৫-৫০ ভাগ ওষুধ ফ্রি দিয়ে থাকি। এবং বিভিন্ন পরামর্শসহ সব সময় খোঁজ খবর রাখি। আশা করছি এবছরও জেলার খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হবেন।

বি/ এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে