মাফি মহিউদ্দিন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) থেকেঃ নিতাই ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের ভ্যান চালক কালাশাহর স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। গত এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম (২৫) এর প্রসব বেদনা শুরু হলে কালাশাহ তাঁর নিজের ভ্যানে করে তাঁকে নিয়ে যান নিতাই ইউনিয়নের মুশরুত পানিয়াল পুকুর বেলতলি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।

সেখানে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফ, ডাব্লিউ,সি ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় তাঁর সন্তান প্রসব হয়। এজন্য ওই মাকে কোন টাকা দিতে হয়নি। বরং তাঁকে বিনামুল্যে ওষুধ সহ দেওয়া হয়েছে অনেক পরামর্শ। ফিরোজা এজন্য এফ, ডাব্লিউসহ অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ফিরোজা এই ভেবে খুশি যে, বাড়ির কাছেই তাঁর সন্তান প্রসব হয়েছে। তাঁকে শহরে গিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়নি।
এই সুবিধা শুধু ফিরোজা বেগমের নয় বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে হাজার হাজার অসহায়, দরিদ্র, ও হতদরিদ্র মায়েদের সন্তান প্রসবের ভরসা স্থল এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো ।আর এ কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিশন পেরেয়ার লীগ (lamb) শো প্রকল্প।

জানা গেছে, সরকারীভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সন্তান প্রসবের নির্দেশনা থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল,অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে গর্ভবর্তী মায়েদের শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হত। কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্যে পাঠানো হত। কিন্তু বর্তমানে গত ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিশন পেরেয়ার লীগ (lamb) শো প্রকল্প গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ সন্তান প্রসবের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে গ্রাম পর্যায়ের অসহায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র মায়েদের ভরসা স্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক।

শো প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়কারী মৃনালকান্তি রায় বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শো প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের এপিল মাসে। ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে শো প্রকল্প উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র , ২ টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ মোট ৯ টি ক্লিনিকে নিরাপদে সন্তান প্রকল্পের কার্যক্রম হাতে নেয়। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৩৪১ জন দরিদ্র ও হতদরিদ্র মায়েরা সন্তান প্রসব করে। এবং ২০৭ জন মায়ের প্রসব ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ায় তাদেরকে উপজেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়।

নিতাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এফ ডাব্লিউ সি আদুরী বেগম বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে কতজন মা সন্তান সম্ভবা তার তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমরা প্রতিমাসে মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি। সন্তান প্রসবের সময় গ্রামের দরিদ্র মায়েরাই আমাদের কাছে আসে। আর যারা বড়লোক তারা আগে ভাগেই বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার এসসিএইচপি খন্দকার সামছুল আলম বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু সদর ইউনিয়ন বাদ দিয়ে বাকি ৮ টিতে মায়েদের সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা আছে। ফলে গ্রামের দরিদ্র মায়েরাই এ সুবিধা ভোগ করছে। তিনি আরো বলেন গত এপ্রিল মাসেই ৪০ জন মায়ের নিরাপদে সন্তান প্রসব করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে