ডেস্ক স্পোর্টসঃ একবিংশ শতকে এসে ফুটবলের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস কার হবে? ফিফার কাছে মাথা নত করে আমেরিকার মতো মহাশক্তিধর দেশও। স্থান-কাল-পাত্র, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফুটবলের জয়গান গাইছে সবাই। ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েও একজন ফুটবলভক্ত পোড়া পত্রিকার পাতায় খুঁজে নিচ্ছে প্রিয় ক্লাবের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের ছোট্ট ছেলেটিও মেসির অন্ধ ভক্ত। ফুটবলের এই যে জনপ্রিয়তা, এত আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন এসবের পিছনে কত রক্ত আর ঘাম ঝরেছে? কত বিখ্যাত ফুটবলারকে আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে? ভাঙা মন নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে কত বিখ্যাত ফুটবলারকে?

ইয়োহান ক্রুইফ, ফেরেনচ পুসকাস, জিকোর মতো তারকারা বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। তারপরও তাদের প্রশংসার কমতি নেই। ভক্তকূলের গুনতি নেই। কিন্তু পুসকাসের জমানায়ও ফুটবলের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল পেলের। জিকোর জামানায় এই দায়িত্ব পালন করেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। বাংলাদেশে ফুটবল বিতর্কটা দুজনকে কেন্দ্র করেই। পেলে নাকি ম্যারাডোনা? দুই ক্ষণজন্মা ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কত মারামারি হয়ে গেল। কিন্তু এ লড়াইয়ের কোনো মীমাংসা নেই। কারও সাধ্য নেই একটা সমঝোতা এনে দেয়! পেলে আর ম্যারাডোনাকে নিয়ে এই বিতর্ক কেবল তাদের জনপ্রিয়তারই প্রমাণ বহন করে।

ভিন্ন কথায় বলতে গেলে, ফুটবলের জনপ্রিয়তা তুলে ধরে। ফুটবলে অনেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পুসকাসকে বলা হয় ‘গ্যালোপিং মেজর’। ইয়োহান ক্রুইফকে বলা হয় ‘দি ফাদার অব টোটাল ফুটবল’। গারিঞ্চা, পাওলো রোসি, রবার্তো বাজ্জিও, রোমারিও, রোনাল্ডো আর জিদানরাও কম জনপ্রিয় ছিলেন না। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়তায় পেলে আর ম্যারাডোনার কাছাকাছি নেই কেউ। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বহুবার পেলে ও ম্যারাডোনা সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়েও কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি। সিদ্ধান্তটা তাই ঝুলেই রইল। কার জনপ্রিয়তা বেশি বলা কঠিন। ফুটবলে পেলে আর ম্যারাডোনার পর ভক্তকূলের মধ্যে এমন নাড়া দিতে পারেননি আর কেউ। অন্তত এতদিন বিষয়টা সত্যিই ছিল। রোমারিও, রোনাল্ডো, বাজ্জিও কিংবা জিদানরা বিশ্বকাপ জিতে কিংবদন্তির তালিকায় নাম লেখালেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে পেলে-ম্যারাডোনার উচ্চতায় উঠতে পারেননি কেউ।

সবকিছু বদলে দিলেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার এ আর্জেন্টাইন জাদুকর এখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। তবে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তায় পেলে-ম্যারাডোনার মতোই তিনি। সম্ভবত তাদেরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন এই একটা দিক থেকে! টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ফেসবুকে মেসি কোন পোস্ট দিলেন, মুহূর্তেই লাইক আর কমেন্টের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় হাজার, লাখ, কোটি। ভাচুয়াল জগতেই কেবল নন, মেসির এই জনপ্রিয়তা ইউরোপ আর আমেরিকার সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর প্রতিটা কোনায়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগান বালক পলিথিন দিয়ে মেসির জার্সি বানিয়ে বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। সেই বালককে মেসি তার জার্সি উপহার দিয়েছিলেন। এমনি করে পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে মেসি ভক্তরা। কোনো শহরে পা রাখলে মেসিকে দেখার জন্য পুরো শহর রাস্তায় নেমে আসে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেড পাহারা বাদ দিয়ে মেসির সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

খেলার মাঠে পুলিশি বাধা ডিঙিয়ে মেসির পায়ে চুমু খেতে ছুটে যান ভক্তরা। এগুলো মেসির জনপ্রিয়তার টুকো ছবি মাত্র। বর্তমান ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তারকা নেইমার একবার বলেছিলেন, ‘আমি মেসির সঙ্গে খেলতে পেরেই নিজেকে গর্বিত মনে করি।’ নেইমারের এই বক্তব্যের সমর্থক সুয়ারেজ থেকে শুরু করে হাল আমলের অনেক বড় বড় তারকাই। তবে একটা বিশ্বকাপ জিতলেই কেবল মেসি দাবি করতে পারেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারের মুকুট। রাশিয়া বিশ্বকাপেই তিনি পেতে যাচ্ছেন শেষ সুযোগ! বর্তমান ফুটবল দুনিয়ায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও কম জনপ্রিয় নন। পরিশ্রম, গোল করার অসাধারণ ক্ষমতা এবং আরও অন্যান্য গুণের সমাহার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও এক অনন্য স্থান এনে দিয়েছে। কিন্তু লিওনেল মেসির সারল্য, শিশুর মতো নির্মল হাসি আর মন ভুলানো ফুটবল সবমিলিয়ে ছাপিয়ে গেছে সবাইকে।

B/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে