asadujjaman

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ সময়ের বৈরিতা দেখেছেন, দিনযাপনের দৈনতা বোধ করেছেন, অনুভব করেছেন বিপ্লবে বিপ্লবে মানুষের অধিকার আদায়ের আর্তনাদ ও বীরত্ব। খেটেছেন জীবনের জন্য, ছুটেছেন জীবনের মূল্যবোধের পেছনে; পেয়েছেন আকাশ ছোঁয়া সাফল্য। ছাত্র জীবনের বামপন্থি রাজনীতিক থেকে হয়ে উঠেছেন রাষ্টযন্ত্রের অন্যতম একজন। সাধারণ এক থিয়েটার কর্মী থেকে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক অভিনেতা।

বলছি আসাদুজ্জামান নূরের কথা। যিনি কালজয়ী হয়ে আছেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে। আজ তার জন্মদিন। এবছরে তিনি ৭০ বছর বয়সে পা রাখলেন। ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আসাদুজ্জামান নূর। তার বাবার আবু নাজিম মো. আলী এবং মাতা আমীনা বেগম। নীলফামারী বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ছোট্ট মফস্বল শহর। এই শহরে শৈশব-কৈশোর আর তারুণ্যের প্রথম ভাগ কেটেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রী ও বর্তমান সময়ের চিরসবুজ অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের।

বাবা-মা ছিলেন দু’জনই স্কুল শিক্ষক। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ১৯৮২ সালে ডাক্তার শাহীন আকতারকে বিয়ে করেন। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সুদীপ্ত বর্তমানে লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে কর্মরত। মেয়ে সুপ্রভা সেও লেখাপড়া শেষ করেছে।

জীবনে প্রথম দিকে বাম রাজনীতিকে গায়ে মেখে দুর্বার যাত্রা শুরু করেন। শ্রেণি-সংগ্রাম, ক্ষুধা ও দারিদ্র বিমোচনের জন্য তিনি লড়াই-সংগ্রাম করেছেন জীবনের অনেকটা সময়। বহমান স্রোতের আদর্শবান পুরুষ হিসেবে আসাদুজ্জামান নুর পেয়েছেন যশ, খ্যাতি, প্রশংসা, পুরস্কার এবং সর্বশেষ এ দেশে লক্ষ কোটি দর্শকদের ভালোবাসা।

প্রথম জীবনে ছাত্র অবস্থতায় তিনি বাম রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন আসাদুজ্জামন নূর। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।

জীবনের দ্বিতীয় ভাগে হয়ে উঠেন অভিনয়ের যোদ্ধা। তিনি কখনও ‘এই সব দিনরাত্রির শফিক’ কখনও ‘অয়োময়’-এর ছোট মীর্জা চরিত্রে অভিনয় করে লক্ষ লক্ষ দর্শক-শ্রোতার প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে। অবশ্য নক্ষত্রের রাত নাটকে তার হাসান চরিত্রটিও একজন উঁচু পর্যায়ের দার্শনিকের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য এসব নাটক ছিলো প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রচিত।

একই লেখকের রচনা ও পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমনি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেও নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে কেবল অভিনয়ের ভুবনে নিজেকে সমৃদ্ধ করেই চলেছেন। অভিনয় তার কতোটা প্রিয় সেটি টের পাওয়া যায় যখন একজন মন্ত্রী হয়েও তাকে প্রায় সময়ই অভিনয় করতে টিভির সামনে দেখা যায়।

আসাদুজ্জামান নূর ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১‎৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিলফামারী জেলা হতে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন। আসাদুজ্জামান নূর থিয়েটারের লোক। মঞ্চ থেকেই তার মতো অভিনেতার উত্থান। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি বহুকাল ধরে কাজ করে আসছেন। এই দলের জন্য বিদেশি একটি নাটকের অনুবাদ করেছিলেন নূর। জনপ্রিয় সেই প্রযোজনাটির নাম ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবারো তারই নির্দেশনায় সম্প্রতি এর তিনটি প্রদর্শনী হয়েছে। যেখানে অভিনয় করেছেন নূরেরই বন্ধুবর আবুল হায়াত, আলী যাকেরসহ আরো অনেকে।

আসাদুজ্জামান নূর জনপ্রিয় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এশিয়াটিক সোসাইটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নাগরিকসহ অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।

অভিনেতা, আবৃত্তিকার, অ্যাড নির্মাতা, ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বশেষ একজন আদর্শ পিতা ও একজন আদর্শ স্বামী তিনি। তবে আসাদুজ্জামান নূর নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন।

নন্দিত এবং বরেণ্য এই মিডিয়া ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের জন্মদিনে বিডি নীয়ালা নিউজ পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তিনি আরো অনেক দিন বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে; সংস্কৃতির অভিভাবক হয়ে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে