karon-johor

আন্তর্জাতিক রিপোর্টঃ পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হবার পর সেটি রাজনৈতিক-সামরিক অঙ্গন ছাড়িয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে । যার উত্তাপ সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যাচ্ছে বলিউডে।

বিশেষ করে পাকিস্তানি তারকা অভিনীত বড় বাজেটের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতি এতটাই তিক্ত যে, চলচ্চিত্রটির পরিচালক ক্ষমাও চেয়েছেন।

চলতি বছরের সবচেয়ে বড় বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোর একটি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, কিন্তু ব্লকবাস্টারটি প্রায় ডুবতেই বসেছিল। যার কারণ- সিনেমাটির প্রধান একজন অভিনেতা ফাওয়াদ খান একজন পাকিস্তানি।

চলচ্চিত্রটির একটি সংলাপে এমন রয়েছে ফাওয়াদ খানের চরিত্র বলছে, “এত বছরের সম্পর্ক কীভাবে শেষ হতে পারে?”

যদিও ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই মসৃণ ছিল না, কিন্তু গত মাস থেকে সেটি আরো অনেক খারাপ হয়েছে।

ভারতীয় একটি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানকে দোষারোপ করলো, তারপর থেকেই নতুন উত্তেজনার সূত্রপাত।

‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ নামের সিনেমাটির বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা হুমকি দেয় যে, যে প্রেক্ষাগৃহেই এটি প্রদর্শিত হবে সেখানেই তারা হামলা চালাবে।

চলচ্চিত্রটির পরিচালক করন জোহর নতমস্তকে দুখ:প্রকাশ করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে ভবিষ্যতে আর কখনো তিনি পাকিস্তানি অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করবেন না।

“আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্মান করি, আমি তাদের স্যালুট করি। তারা আমাদের নিজস্ব পরিবেশে আমাদের রক্ষা করার জন্য যা করছে, তার জন্য আমি হৃদয় থেকে তাদের সম্মান করি”।

কিন্তু মাত্র গত সপ্তাহেই চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যাণ তহবিলে ৫ কোটি রুপির একটি দান করার পর চলচ্চিত্রটির ওপর থেকে হুমকি তুলে নেয়া হয়। অনেকেই এটিকে বলছেন ‘স্রেফ চাঁদাবাজি’।

সাংস্কৃতিক যুদ্ধেরও সমাপ্তির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভারতে পাকিস্তানী অভিনেতা ও কলাকুশলীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার জবাবে পাকিস্তান তাদের দেশে কোন ধরনের ভারতীয় বিনোদন প্রদর্শনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাতের মধ্যে বলিউডকে টেনে আনা অনেকেই পছন্দ করছেন না এবং এর বিপক্ষে কথা বলছেন।

একটি চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা অভয় দেওল বলছিলেন “যদি পাকিস্তানের বিষয়ে আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিতে চান তাহলে যতদূর যাওয়া যায় যান। শুধু চলচ্চিত্রের লোকজন কেন? অর্ধেক কাজ না করে বরং ব্যবসা বন্ধ করুন, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করুন।”

ভারতের কিছু জনপ্রিয় টক শো-তেও পাকিস্তানের বিপক্ষে আরো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোরেশোরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যেমন টাইমস নাও নামের একটি চ্যানেলের টক-শো’তে বলা হচ্ছে “রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এমনকি সামরিকভাবে হলেও আমাদের পাকিস্তানের ওপর বলপ্রয়োগ করে তাদেরকে নতি স্বীকার করাতে হবে”।

উগ্র জাতীয়তাবাদী এই প্রচারণা বিপদজনক এবং এটি সংঘাতকে আরো উস্কে দিতে পারে। তবে শীর্ষপর্যায়ের একজন সাংস্কৃতিক ভাষ্যকার সুহাইল সেথ মনে করেন, বিষয়টাকে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে।

“এটি এমন একটা ককটেল যেটি কেউ পান করবে না। এই ককটেলটা বানানো হয়েছে বারে সাজিয়ে রাখার জন্য। আমরা যুদ্ধে যাব, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বা দুই দেশ একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে এধরনের কোনও দুশ্চিন্তা আমি করি না। আমার এই আত্মবিশ্বাস আছে, কারণ আমি আমার দেশকে খুব ভাল করেই জানি”।

পাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা এবং ভারতে পাকিস্তানী তারকাদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক কতটা কাছের। তবে পারিবারিক ঝগড়ার মতো দুই পক্ষেরই আবেগ খুব দ্রুতই তুঙ্গে উঠতে পারে, আবার কখনো কখনো একইভাবে খুব দ্রুতই সেটি মিলিয়েও যেতে পারে।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে