আজিজ খান, গোলাপগঞ্জ (সিলেট) থেকে: করোনাভাইসের সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসন নানা নির্দেশনা দিলেও তা খুব একটা আমলে নেয়নি সাধারণ মানুষ। তখন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় এলাকায় স্বেচ্ছায় লকডাউনে এগিয়ে আসছেন স্থানীয় তরুণরা। পাড়া, মহল্লা বা গ্রামে ও উপজেলার গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে টাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে হাতে লেখা নোটিশ। অনুরোধ করা হচ্ছে অপ্রয়োজনে যেন অন্য এলাকার লোকজন যেন এই এলাকায় না আসেন। একইভাবে স্থানীয় লোকজনকে জানানো হচ্ছে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের না হন।

উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় কয়দিন ধরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ধীরে ধীরে প্রায়ই  এলাকার জনসাধারণ এই পথে হাঁটছেন। খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাসা বা বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। অতিথি, গৃহপরিচারিকাদের আসা যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশিরভাগ এলাকায়। ইতিমধ্যে দেশের অনেক জায়গায় এটা হয়ে থাকলেও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ‘লকডাউন’ গত  দুুদন ধরে প্রায় গ্রামে হচ্ছে।

প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, ৮ এপ্রিল উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির কানিশাইল শাহ হারুন ও শাহ মুসা রঃ (বড় মোকাম) মাজার গেইট, ৩নং ফুলবাড়ি ইউপির জাফর পুর গ্রাম ও ভাদেশ্বর ইউপির মাইজভাগ গ্রাম। তাছাড়া গতকাল উপজেলার পৌর এলাকার দাড়িপাতন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরি মোকাম মহল্লা, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হেতিমগঞ্জ চলছে ‘লকডাউন’।

এদিকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে নিজেরাই নিজ উদ্যোগে করা ‘লকডাউন’ এখন সবাই তা মানছেন। বিভিন্ন রাস্তার মুখে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ‘স্বেচ্ছায় লকডাউন’ সাইনবোর্ড লাগানো দেখা গেছে। মানুষের এই সচেতনতার প্রশংসা করেছেন অনেকেই।

জানা গেছে, ‘লকডাউন’ এসব গ্রামের প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে ফটক তৈরি করে বাধা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রামজুড়ে ছিটানো হয়েছে জীবাণুনাশক। প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে হ্যান্ডস্যানিটাইজার। বাইরের এলাকার কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না তাদের গ্রামে। আবার যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে গ্রাম থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।

নিজ উদ্যোগে ‘লকডাউন করা স্থানীয় যুবকদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা রুমেল সিরাজ বলেন, নিজেকে বাঁচাতে, পরিবার কে বাঁচাতে ও গ্রামকে বাঁচাতে সকলের স্বার্থে করোনা ভাইরাসের কারনে সচেতনতার জন্য আমাদের প্রিয় গ্রাম মাইজভাগ কে লকডাউন করা হলো। আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যাতে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা যায়। বলা হয়েছে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে যাবেন না।বিশেষ করে মাইজভাগের কেউ অসুস্থ হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ (০১৭১৯২৩৭৩৭১) করুন।

উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান মনসুর বলেন, কানিশাইল শাহ হারুন ও শাহ মুসা রঃ (বড় মোকাম) মাজরের নিকটে আমার বাড়ি। প্রতি শবেবরাতের সময় মাজার এলাকা মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরের লোকেরা অবাধে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য এলাকার সকল তরুণরা মাজার গেইট ‘লকডাউন’ করেছে এবং এলাকার সকলের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শুরু থেকেই নানাভাবে মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে। একটু সময় লাগলেও এখন মানুষ সচেতন হয়ে ঘরে থাকছে বা নিজেরাই মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করছে-এটা সবার সম্মিলিত চেষ্টার ফসল।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, সচেতন গ্রামবাসী নিজেদেরকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এখন যার যার অবস্থান থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে