ডেস্ক রিপোর্টঃ পূর্বের রেকর্ড ভেঙে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। চলতি বছর এরই মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ২৪৮ জন। যার মধ্যে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৪ জন। গতকাল সোমবার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ১ হাজার ৬৬৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানা গেছে। ফলে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এদিকে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মাসে বা ভরা মৌসুমে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করে আক্রান্তের এই অনুমিত সংখ্যা পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারি দপ্তরটি বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব রোগী সরকারি নজরদারির মধ্যে নেই। চিকিৎসা নিতে আসা মাত্র ২ শতাংশ রোগী সরকারি নজরদারির মধ্যে পড়ে। ৯৮ শতাংশের কোনো তথ্য থাকে না। আবার আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নেয় না। জানা যায়, জুলাই মাস ডেঙ্গু বিস্তারে উপযুক্ত সময়। এসময় মানুষের অসচেতনতায় বাড়ে এডিস মসার উপদ্রব। আগের যেকোন সময়ের তুলনায় এখন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডেঙ্গু মোকাবিলায় এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ফলো করতে হবে জাতীয় গাইড লাইন। আর প্লাটিলেট নয়, বেশি গুরুত্ব দিতে হবে রক্তের ঘনত্বের দিকে। এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ডাক্তার, নার্সকে প্রশিক্ষণ ও হাসপাতালগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ে জ্বর দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল বাদে অন্য কোন ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ তাদের। মশা নিয়ে গবেষণা করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, এবার ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়েছে। এডিস মশার ডিম ছয়মাস পর্যন্ত শুকনো স্থানে থাকলে বেঁচে থাকতে পারে। এবার আগে বৃষ্টির কারণে ও এখন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। আবার ঢাকাসহ সারাদেশে পানির স্বল্পতার কারণে মানুষ বালতি কিংবা ড্রামে পানি জমিয়ে রাখে। আর বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ কাজের সাইটগুলোতে চৌবাচ্চা, ড্রাম এডিস মশার বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। সে কারণেই দেশজুড়ে জেলা উপজেলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ সাইটগুলোতে পানি জমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ে প্রচার প্রচারণা কিছু চোখে পড়লেও ঢাকার বাইরে বিশেষ করে মফস্বল এলাকাগুলোতে এ নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪৯টি হাসপাতালে গতকাল নতুন করে ৪০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪৯ জন রোগী ভর্তি ছিল। এছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ১৭১ জন রোগী ভর্তি ছিল। গত কয়েক বছরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। এ বছর ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আমার দেশ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে