dal-chola

বিডি নীয়ালা নিউজ(১০ই মে১৬)-অনলাইন প্রতিবেদনঃ  সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত নিত্যপণ্যের মজুদ আছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ হুঁশিয়ারির পরও বাড়ছে পণ্যের দাম। এর মধ্যে রমজানের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য ছোলার দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী।

আমদানি কম ও  আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম বেশি থাকায় রোজার আগে পণ্যটির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর মতে, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ছোলার দাম বাড়বে। আর তাতে মাসুল গুণতে হবে ভোক্তাদের।

দেশে সারাবছর প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৭০ হাজার মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানির মাধ্যমে ছোলার বিশাল চাহিদা মেটানো হয়।

জুলাই ২০১৫ থেকে মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৯ মাসে আমদানিকারকরা ছোলা আমদানির জন্য ৫৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টনের এলসি খুলেছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টনের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ রমজানের চাহিদার মাত্র অর্ধেক ছোলা আমদানি করা হয়েছে।

বর্তমানে  আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম প্রতি টনে ১৩০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে ৮৮০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতি টন ছোলার দাম জানুয়ারিতে ছিল ৭৫০ ডলার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজায় ছোলাসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। দেশে ছোলার উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা মেটাতে আমদানির উপরই নির্ভর করতে হয়। আর আমদানির বড় অংশই আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবি ছোলার আমদানি করছে। রোজা উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ছোলা কেনা হয়েছে। যা চলতি মাসের ২২ তারিখ দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানান টিসিবি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. হুমায়ন কবির।

ছোলাসহ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, কেউ যদি কারসাজি করে দাম বাড়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত রোববার স্থায়ী কমিটির ১৬তম বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা জানান।

তিনি আর জানান, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় ১৪টি টিম কাজ করবে। তারা সোমবার থেকে মাঠে নামবে। সারাদেশেও টিম থাকবে। অথচ সোমবার পার হয়ে গেলেও কোনো টিম মাঠে নামার খবর পাওয়া যায়নি।

হু হু করে বাড়ছে ডাল ও ছোলার দাম। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এসব ছোলা বিক্রি হতো ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা।

টিসিবির তথ্য মতে, সোমবার বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে ৭৮ থেকে ৮৪ টাকায় এবং এক মাস আগে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হতো। সংস্থাটির হিসাব মতে, এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ।

ছোলার সঙ্গে মসুর ডালের দামও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। খুচরা বাজারে দেশি মসুর ডাল মানভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়, তুরস্ক থেকে আমদানি করা মোটা দানার ডাল ১০৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকা, নেপালী মসুর ডাল ১৪৫ টাকা তেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সব ধরনের ডালে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু বাড়ছে। তাই খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো মনিটরিং তাদের নজরে আসেনি বলে জানান তারা।

কাপ্তান বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী মনিহার ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘গত এক বছরে কোনো মনিটরিং টিম আমাদের বাজারে দেখা যায়নি। আর এখানে এসে তাদের কোনো কাজও হবে না। দাম তো বেশি বাড়ায় মজুদদাররা।’

ডাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, মূলত ছোলা আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। অস্ট্রেলিয়ার বাজারে দাম বেশি থাকার কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে।

তারা বলছেন, যদি ছোলাসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ও সহনশীল রাখতে হয় তাহলে সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-কে পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে। টিসিবিকে অকার্যকর রেখে বাজারে পণ্যের দর সহনশীল পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে না। তারা আরও বলছেন, দাম বাড়া-কমার সঙ্গে আমদানিকারকরা সরাসরি জড়িত।

ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাফি মাহমুদ বলেন, ‘ছোলা বা অন্যান্য নিত্যপণ্য গুটি কয়েকজন ব্যবসায়ী আমদানি করে। তাদের সংখ্যা কম হলেও প্রভাব বেশি। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে আমদানিতে পাল্লা দিতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়। আমরা একাধিকবার ডাল ও ছোলা আমদানি করে লোকসানে পড়েছি।’

পুরান ঢাকার লালবাগের রহমতগঞ্জের ডাল পট্টির পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজধানী ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী মঞ্জুরুল হক জানান, সোমবার প্রতিকেজি ছোলা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭৭-৮০ টাকা এবং ভালো মানের বার্মার ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৮ -৯০ টাকা।

এ ছাড়া যে মসুরি ডাল পাইকারি বাজারে এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়, তা এ সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২২-১৩৭ টাকায়। সোমবার দেশি মসুরি ১৩৭-১৩৮ টাকা, দেশি হাইব্রিড ১০৫-১০৮ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার নিম্নমানের মসুরি ৯৫-৯৮ ‍টাকা, খেসারি ৭০-৭১ টাকা, ডাবলি (অ্যাঙ্কর) ৪০-৪২ টাকা, মুগ ডাল দেশি ভাল মানের ৯৫-১০০ টাকা, হাইব্রিড ৬৩-৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, নেপালের বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী ডাল কিনেছিল কিন্তু দাম বেড়ে গেলে নেপালের ব্যবসায়ীরা ডাল আটকে দেয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে (দাম সমন্বয় করে) ডাল ছাড়িয়ে আনতে হয়। নেপালের বাজারে প্রতিকেজি মসুরি ডাল ১৩৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা। তবে ডালের দাম রোজার আগে আরেক দফা বাড়লেও রোজার মাঝামাঝি সময়ে তা কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, ‘রোজার অনেক ‍আগেই ব্যবসায়ীরা কৌশলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ সরকার যখন বলবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে তখন তারা আর পণ্যের দাম বাড়াবে না।’

##বাংলামেইল

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে