আন্তর্জাতিক রিপোর্ট : আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অষ্টম আসরের সপ্তম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারালো পাকিস্তান। এই জয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের অস্তিত টিকিয়ে রাখলো পাকিস্তান। এ ম্যাচের ফলে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা উভয় দলেরই। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২১৯ রানের পুঁিজ পায় প্রোটিয়ারা। জবাবে ২৭ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৭ রান তুলে পাকিস্তান। এরপর বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। প্রায় দু’ঘন্টার মত খেলা বন্ধ থাকার পর পরে বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানকে জয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ পরিচালনাকারীরা।
বার্মিংহামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্বান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। ব্যাট হাতে শুরু থেকে পাকিস্তানের বোলারদের ভালোভাবেই সামাল দেন প্রোটিয়া দুই ওপেনার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা। ৫০ বল মোকাবেলা করে ৪০ রান তুলেন তারা। দুই পেসার উইকেট নিতে ব্যর্থ হলে স্পিনারদের আক্রমনে এনে সাফল্য পান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ।
আমলাকে ১৬ রানে থামিয়ে দেয়ার পর প্রোটিয়া দলপতি ডি ভিলিয়ার্সকে শুন্য রানে থামিয়ে দেন পাকিস্তানের বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। অন্য প্রান্ত দিয়ে ডি কককে তুলে নেন অফ-স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ। ৩৩ রান করেন ডি কক। এতে ৩ উইকেটে ৬১ রানে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেখান থেকে ডেভিড মিলারকে নিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন ফাফ ডু-প্লেসিস। কিন্তু এই জুটিকে ২৯ রানের বেশি করতে দেননি পাকিস্তানের পেসার হাসান আলী। ডু-প্লেসিসকে ব্যক্তিগত ২৬ রানে শিকার করে আবারো পাকিস্তানকে উইকেট শিকারের আনন্দে ভাসান হাসান।
এছাড়া ২৯তম ওভারের শেষ দু’বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান জেপি ডুমিনি ও ওয়েন পার্নেলকে শিকার করেন হাসান। ডুমিনি ৮ ও পার্নেল শুন্য রানে ফিরেন। ফলে দেড়শ’র নীচেই গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু সেটি হতে দেননি কিলারখ্যাত ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার। সপ্তম উইকেটে ক্রিস মরিসের সাথে ৮১ বলে ৪৭ ও অষ্টম উইকেটে কাগিসো রাবাদার সাথে ৩৯ বলে ৪৮ রান যোগ করেন মিলার। ফলে দুশ’র কোটা পেরিয়ে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২১৯ রানে মামুলি সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন মিলার। তার ১০৪ বলের ইনিংসে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার ছিলো। এছাড়া মরিস ২৮ ও রাবাদা ২৬ রান করেন। পাকিস্তানের হাসান আলী ৩টি ও জুনায়েদ-ওয়াসিম ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের ২২০ রানের লক্ষ্যে শুরুটা দক্ষিণ আফ্রিকার মতোই করেছিলো পাকিস্তান। প্রোটিয়াদের মত উদ্বোধণী জুটিতে ৪০ রান পায় তারা। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ফকর জামান শুরু করেছিলেন মারমুখী মেজাজে। ৬টি চারে ২৩ বলে ৩১ রান তুলে ফেলেন তিনি। তবে আরও ভয়ংকর হবার আগেই জামানকে থামিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মরনে মরকেল।
অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে জামানের উইকেট নেয়ার ১ বল পর পাকিস্তানের আরেক ওপেনার আজহার আলীকেও নিজের শিকার বানান মরকেল। ২২ বল মোকাবেলা করে ৯ রান করেন আজহার। ৪১ রানের মধ্যে পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দারুনভাবে খেলায় ফেরান মরকেল।
তবে তৃতীয় উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ একটি জুটি গড়েন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ। বেশ সর্তকতার সাথে খেলে দলের স্কোর সামনের দিকে নিয়ে গেছেন তারা। এ জুটি অর্ধশতক রান যোগ করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন পাকিস্তানের দিকে নিয়ে আসেন বাবর ও হাফিজ। এরপরই এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান প্রথম দুই উইকেট নেয় পেসার মরকেল। ২৬ রানে থাকা হাফিজকে থামান মরকেল। ১টি করে চার ও ছক্কায় ৫৩ বল খেলে নিজের ইনিংসটি সাজান হাফিজ।
দলীয় ৯৩ রানে হাফিজের বিদায়ের পর আকাশ ধীরে ধীরে মেঘলা হতে থাকে। সেটা ক্রিজে থেকে আচ করতে পেরেছিলেন বাবর ও পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং-এ নামা শোয়েব মালিক। তাই বৃষ্টির আইনের কথা মাথায় রেখে দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন তারা। ২২ বল মোকাবেলা করে ২৬ রান যোগ করেন বাবর-মালিক। এতে ২৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ১১৯-এ। এরপরই নামে বৃষ্টি। পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর, বৃষ্টির আইনে হিসাব-নিকাশে ১৯ রানে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তানকে জয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ পরিচালনাকারীরা।
বাবর ৫১ বলে ৩১ ও মালিক ১৪ বলে ১৬ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন। ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন পাকিস্তানের হাসান।
আগামী ১২ জুন শ্রীলংকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। পক্ষান্তরে ১১ জুন ভারতের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২১৯/৮, ৫০ ওভার (মিলার ৭৫*, কক ৩৩, হাসান ৩/২৪)।
পাকিস্তান : ১১৯/৩, ২৭ ওভার (বাবর ৩১*, জামান ৩১, মরকেল ৩/১৮)।
ফল : বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে জয়ী পাকিস্তান।
ম্যাচ সেরা : হাসান আলী (পাকিস্তান)।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে