মোঃ ফরহাদ হোসেন, বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সিলগালাকৃত গুদাম হতে চালের বস্তা রহস্যময়ভাবে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিলগালা খুলে গুদামে ঢুকলে জব্দ করা ১১৩০ বস্তার মধ্যে মাত্র ছয় বস্তা চাল পাওয়া গেছে।

তদন্ত শেষে পুনরায় গুদামটি সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

জানা যায়, অবৈধভাবে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল মজুদ করায় ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সারিয়াকান্দি উপজেলার বাগবেড় গ্রামের শাহিন আলমের গুদামে অভিযান পরিচালনা করে সেখানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় ও বিতরণযোগ্য সরকারি ১ হাজার ১৩০ বস্তা চাল জব্দ এবং গুদামটি সিলগালা করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান আতিকুর রহমানের জিম্মায় দেওয়া হয়। একইসাথে গুদামের মালিক শাহিন আলম কৃষি বিপণন নিবন্ধন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে ওই গুদামের চাল উধাও হওয়ার গুজব ওঠে। এবং সংবাদ কর্মীরা বিভিন্ন পত্রিকায় চাল উধাও হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের প্রতিনিধি সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধি সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল হক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) আবুল হোসেন খান, সারিয়াকান্দি খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান আতিকুর রহমান, কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মাহবুবুল হক এবং সারিয়াকান্দি থানার ওসি (তদন্ত) আশরাফুল আলম সহ গুদামে যান। তারা সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে সিলগালা খুলে গুদামে প্রবেশ করলেও উপস্থিত কোনো সাংবাদিককে গুদামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তদন্ত কমিটি প্রায় দুই ঘণ্টা তদন্ত শেষে আবার গুদাম সিলগালা করে চলে যান। উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দরা তথ্য জানতে চাইলে, কোনো তথ্য না দিয়েই চলে যান তদন্ত কমিটি।

শুক্রবার রাতে এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান মোঃ আতিকুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হলেও চালগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশকে দেয়া হয়েছিল। গুদামটি সুরক্ষিত না হওয়ায় বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমাকে সিলগালাকৃত গুদামের কোনো চাবি দেওয়া হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি দ্বারা গুদাম পরিদর্শন করে ০৬ বস্তা চাল পাওয়া গেছে।

গুদাম থেকে চাল উধাওয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা শাহাদত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার গুদামের চালগুলো বৈধ ছিল। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানেকালে আমরা কাগজপত্র দেখিয়েছিলাম কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তা আমলে নেননি। তিনি আরও বলেন, আমার গুদামে চাল ছিল ৫৬৪ বস্তা। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালত সেটাকে ১ হাজার ১৩০ বস্তা দেখিয়েছে।

এই কাজের সঙ্গে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান মোঃ আতিকুর রহমান জড়িত। এ ছাড়া আমাকে ফাঁসানোর জন্য বিরোধী পক্ষের লোকজনও এটা করে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন শাহাদত। তবে আমার গুদামে যে পরিমাণ চাল ছিল তা আমাকে বুঝিয়ে না দিলে আমিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

শুক্রবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান মোঃ আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

থানার নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে সারিয়াকান্দি থানার ওসি (তদন্ত) আশরাফুল আলম বলেন, ৩০ নভেম্বর ঘটনা হলেও আমরা ০৪ ডিসেম্বর চিঠি পেয়ে অবগত হয়েছি। সেদিন থেকেই গুদামে পুলিশের টহল অব্যাহত ছিল।

সিলগালা করা গুদাম থেকে চালের বস্তা উধাও হওয়ার ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ান মোঃ আতিকুর রহমান মামলা দায়ের করেছেন। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে