মীর কাসেম

বিডি নীয়ালা নিউজ(৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ইং-ডেস্ক রিপোর্টঃ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া মীর কাসেম আলী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার শর্ত দিয়ে দুই দিন আটকে রাখার পর গতকাল শুক্রবার তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। তাঁর ফাঁসি কার্যকরে এখন আর কোনো বাধা নেই। আজ-কালের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে মীর কাসেমকে।
গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর কাশিমপুর কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরের খাবারের পর বেলা তিনটার দিকে কনডেম সেলে মীর কাসেমের কাছে তিনিসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা দেখা করেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান মীর কাসেম প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। জবাবে মীর কাসেম বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁর ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন যেকোনো সময়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হতে পারে।

কবে ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে জানতে চাইলে জেল সুপার প্রশান্ত বণিক বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) ফাঁসি কার্যকরের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ীই সময়-ক্ষণ ঠিক করা হবে।’

কারা কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, শনিবার রাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার মতো প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। কাশিমপুর কারাগারেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। মানবতাবিরোধী অন্য আসামিদের মৃত্যুদণ্ড যেভাবে কার্যকর করা হয়েছে, ওই প্রক্রিয়ায় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। ফাঁসি কার্যকরের আগে মীর কাসেম আলীর স্বজনেরা তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষই তাঁদের ডেকে পাঠাবে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনেরা দেখা করার ডাক পাননি।

কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারাধ্যক্ষ (জেলার) নাশির আহমেদ জানান, কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দী মীর কাসেম আলী সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়েছে।

মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। গত বুধবার মীর কাসেমের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওই দিনই মীর কাসেমের পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ছেলেকে ছাড়া রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না মীর কাসেম। ডিবি পরিচয় দেওয়া লোকজন গত ৯ আগস্ট তাঁদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে মিরপুরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। ব্যারিস্টার আহম্মেদ তাঁর বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যেকোনো পরামর্শের জন্য তাঁকে প্রয়োজন। আর পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।

কারা কর্মকর্তারা জানান, বুধবার রাতে রিভিউ আবেদনের রায় কারাগারে পৌঁছানোর পরে কারা কর্মকর্তারা মীর কাসেমের কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চিন্তা করার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, তাঁকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়া হয়েছে। এর দুই দিন পর তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানালেন কারা কর্মকর্তারা।

মীর কাসেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া গতকাল  বলেন, ‘“নিখোঁজ” ছেলেকে ছাড়া তিনি (মীর কাসেম আলী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না—এটা আগেই বলেছিলেন। এখন আমরা জেনেছি যে উনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তাঁর ভাই আহম্মেদ বিন কাসেমের কোনো খোঁজ মেলেনি।

এদিকে মীর কাসেমের ফাঁসি হতে পারে—এ খবরে গতকাল বিকেলের পর থেকে কাশিমপুর কারাগারের সামনে উৎসুক জনতা ভিড় করতে শুরু করে। মীর কাসেমের ফাঁসির খবর শুনে টাঙ্গাইলের বাসাইল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া (৬৫) কাশিমপুর কারাগারে চলে আসেন। তিনি জানান, মীর কাসেমের ফাঁসি কাশিমপুর কারাগারে হচ্ছে শুনে তিনি এখানে এসেছেন। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতির কথা শোনান জমায়েত হওয়া মানুষকে।

এদিকে কারাগারের বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষায় কারা ফটকে অতিরিক্ত কারারক্ষী মোতায়েন ছাড়াও ফটকের সামনে প্রচুর পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ  বলেন, কাশিমপুর কারাগার, কারাগারের প্রধান ফটকসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি করছে।

প্র/আ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে