বিডি নীয়ালা নিউজ(৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ইং-ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর রূপনগরে গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশের অভিযানে এক জঙ্গি নিহত ও ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। পুলিশ বলেছে, নিহত জঙ্গির সাংগঠনিক নাম মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীর। তিনি নব্য জেএমবির ‘প্রশিক্ষক’ এবং সংগঠনে নিহত জঙ্গি তামিম চৌধুরীর পরেই ছিল তাঁর অবস্থান। নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, তামিমের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন এই মুরাদ।

অভিযানে আহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ সহিদ আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির ও উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁদের স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান রাতেই ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের অংশ রূপনগরে পুলিশের এই অভিযান। রূপনগর আবাসিক এলাকায় এক জঙ্গি বাসা ভাড়া নিয়েছে—সুনির্দিষ্ট এই তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালাতে যায় রূপনগর থানার পুলিশ। পুলিশ ওই বাড়ির ষষ্ঠ তলায় গেলে এক জঙ্গি বেরিয়ে এসে পিস্তল দিয়ে পুলিশ সদস্যদের গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এতে রূপনগর থানার ওসি, পরিদর্শক ও এক উপপরিদর্শক আহত হন। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই জঙ্গি নিহত হন।

মোখলেসুর রহমান বলেন, নিহত জঙ্গির সাংগঠনিক নাম কখনো মুরাদ, কখনো জাহাঙ্গীর, আবার কখনো ওমর। প্রকৃত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহত জঙ্গি সরকারি কর্মকর্তা কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের আরেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, নিহত জঙ্গির প্রকৃত পরিচয় না জানা গেলেও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জেনেছে, তিনি জঙ্গিদের প্রশিক্ষক ছিলেন।পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির। গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, নিহত জঙ্গি গত ১ জুলাই পরিবারসহ বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। এরপর একসময় তিনি পরিবারকে রেখে একাই এই বাসায় আসেন।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কয়েক দিন আগে ওই বাড়িতে মুরাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গত ২৮ আগস্ট ওই বাড়িতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশ দেখতে পায়, বাসাটি তালা মারা। তবে ভেতরে জিনিসপত্র রয়েছে। এরপর গোয়েন্দারা কোনো কিছুতে হাত না দিয়ে বাড়ির লোকদের বলে আসে, ওই ব্যক্তি জিনিসপত্র নিতে এলে যেন পুলিশ ও ডিবিকে জানানো হয়। ওই জঙ্গি ফিরে এলে বাড়িটি থেকে তাৎক্ষণিক রূপনগর থানা-পুলিশকে জানানো হয়। এরপর পুলিশ অভিযানে যায়। তিনি বলেন, নিহত জঙ্গি ছয়তলায় ভাড়া থাকতেন। পুলিশ ছয়তলায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লে তিনি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। হামলা করতে করতে তিনি নিচতলায় চলে আসেন। নিচতলায়ই পুলিশের গুলিতে ওই জঙ্গি নিহত হন। রাত একটা পর্যন্ত লাশ সেখানেই পড়ে ছিল।

এদিকে রাত সোয়া নয়টার দিকে আহত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সৈয়দ সহিদ আলমের পিঠে ও শাহীন ফকিরের দুই কুঁচকিতে গুলি লেগেছে। শাহীন ফকিরের বাঁ বাহু ও মমিনুরের ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে।

হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রকিবুল হাসান বলেন, শাহীন ফকিরের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর অবস্থা গুরুতর। আহত অন্য দুজন বিপদমুক্ত। ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ছুটির দিনের কারণে হাসপাতালে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের চিকিৎসক ছিলেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের এই অভিযান শেষ হয়। অভিযান চলাকালে ওই বাড়ির আশপাশ ঘিরে রাখে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে বাড়ির আশপাশে যেতে দেওয়া হয়নি।

ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, বাড়ির মালিক আবুল কালাম আজাদ পিডব্লিউডির অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। তিনি ও তাঁর স্ত্রী পবিত্র হজ পালন করতে গেছেন। যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তাঁকে গত দুই মাসে তিনি কখনো দেখেননি।

প্র/আ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে