আন্তর্জাতিক রিপোর্ট : চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উড়ন্ত সূচনা করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। অষ্টম আসরের চতুর্থ ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে টিম ইন্ডিয়া গতরাতে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। রান ব্যবধানে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি ভারতের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এডজবাস্টনে দু’দফায় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে কমিয়ে ৪৮ ওভারে নামিয়ে আনা হয়ছিলো। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং-এ নেমে চার ব্যাটসম্যানের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ৩১৯ রানে বড় সংগ্রহ গড়ে টিম ইন্ডিয়া। এতে জয়ের জন্য বৃষ্টি আইনে প্রথমে ৪৮ ওভারে পাকিস্তান টার্গেট পায় ৩২৪ রান।
জবাব দিতে নেমে ৪ দশমিক ৫ ওভারে বিনা উইকেটে ২২ রান তোলার পর বৃষ্টির কারনে মাঠ ত্যাগ করে পাকিস্তান। পরবর্তীতে আবার খেলা শুরু হলে ৪১ ওভারে ২৮৯ রানের নতুন টার্গেট পায় পাকিস্তান।
এরপর নতুন টার্গেটে খেলতে নেমে ৪৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। ১২ রানে থাকা ওপেনার আহমেদ শেহজাদকে ফেরান ভারতের পেসার ভুবেনশ্বর কুমার। পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি ভারতকে। তিন নম্বরে নেমে ৮ রান করা বাবর আজমকে শিকার করেন টিম ইন্ডিয়ার আরেক পেসার উমেশ যাদব।
এরপর মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন আজহার। কিন্তু অর্ধশতকে পা দেয়ার পরই থেমে যান সাবেক এ অধিনায়ক। ৬টি চারে ৬৫ বলে ৫০ রান করে ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার শিকার হন আজহার।
আজহারের মতই লড়াই করার চেষ্টা করেন হাফিজ। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের দাপটের সামনে আর পেরে উঠতে পারেননি হাফিজ ও পাকিস্তানের পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। এজন্য ৩৩ দশমিক ৪ ওভারে ১৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
হাফিজের ৩৩ রানের পর শোয়েব মালিক ও অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ১৫ রান করে আউট হন। ১৪ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন শাহদাব খান। ভারতের উমেশ ৩০ রানে ৩টি, পান্ডে ও জাদেজা ২টি করে উইকেট নেন। ৩২ বলে ৫৩ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের যুবরাজ।
এমন জয়ে খুশী ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি, ‘খুবই ভালো পারফরমেন্স। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে আমরা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের ব্যাটিং-বোলিং খুবই ভালো হয়েছে। এজন্য ১০এর মধ্যে আমি দলকে ৯ নম্বর দেবো। কিন্তু ফিল্ডিং-এ আমরা অনেক পিছিয়ে। ফিল্ডিং-এ আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’
আর হারের জন্য দলের বোলিং-কেই দুষলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ, ‘৪০ ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। কিন্তু শেষ আট ওভারে ১২৮ রান তুলে ভারত ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। তাই শেষদিকে আমাদের বোলিং আরও উন্নত করতে হবে।’
আগামী ৮ জুন শ্রীলংকার বিপক্ষে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ভারত। আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে পাকিস্তান। গত শনিবার এই গ্রুপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৬ রানে হারিয়েছিলো শ্রীলংকাকে।
এর আগে এ ম্যাচে আগে ব্যাটিং পাওয়ার সুযোগটা দারুনভাবে কাজে লাগান ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন তারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ তৃতীয়বারের মত সেঞ্চুরির জুটি গড়েন রোহিত-ধাওয়ান। এর আগে সর্বোচ্চ দু’বার করে সেঞ্চুরির জুটি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল-শিবনারায়ন চন্দরপল ও দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস-গ্রায়েম স্মিথ।
জুটিতে শতক পূর্ণ করে ১৩৬ রানে বিচ্ছিন্ন হন রোহিত-ধাওয়ান। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৬৮ রান করে আউট হন ধাওয়ান। তবে একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা সচল রেখে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন ওয়ানডে ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক রোহিত।
কিন্তু অধিনায়ক কোহলির সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে নাভার্স নাইন্টির ঘরে ৯১ রানে আউট হন রোহিত। ৭টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারিতে ১১৯ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান রোহিত।
দলীয় ১৯২ রানে ও ৩৭তম ওভারে রোহিত যখন আউট হন তখন উইকেটে আসেন যুবরাজ। উইকেটের চারপাশে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে ভারতকে বড় সংগ্রহের পথ দেখান একবার ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া যুবরাজ। দ্রুত রান তোলার ফলে ২৯তম বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন যুবরাজ। শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩২ বলে ৫৩ রানে আউট হন যুবরাজ।
দ্বিতীয় উইকেটে রোহিতের সাথে ৭৩ বলে ৫৬ ও তৃতীয় উইকেটে যুবরাজের সাথে ৫৮ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়তে গিয়ে কোহলি নিজেও পেয়েছেন অর্ধশতকের স্বাদ। তাই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৬৮ বলে অপরাজিত ৮১ রান করেন কোহলি। তার এই ইনিংসে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো।
যুবরাজের বিদায়ে নির্ধারিত ওভার শেষ হবার ১০ বল আগে উইকেটে গিয়ে ইনিংসের শেষ ওভারে পাকিস্তানের বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমকে প্রথম তিন বলে টানা ৩টি ছক্কায় ৬ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন হার্ডিক পান্ডে। তাই শেষ ৪ ওভারে ৭২ রান যোগ করতে পারে ভারত। পাকিস্তানের শাহদাব খান ও হাসান আলী ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৩১৯/৩, ৪৮ ওভার (রোহিত ৯১, কোহলি ৮১*, ধাওয়ান ৬৮, যুবরাজ ৫৩; শাহদাব ১/৫২)।
পাকিস্তান (৪১ ওভারে টার্গেট ২৮৯ রান) : ১৬৪/৯ (অলআউট), ৩৩.৪ ওভার (আজহার ৫০, হাফিজ ৩৩, উমেশ যাদব ৩/৩০)।
ফল : ভারত ১২৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : যুবরাজ সিং (ভারত)।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে