ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চীনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসে মোট ১০৬ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন চিকিৎসকরা।

সোমবার পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৫১৫ জন, আগের দিনও যে সংখ্যা ২ হাজার ৮৩৫ জন ছিল। নভেল করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উহানসহ হুবেই প্রদেশের কয়েকটি শহর কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। নববর্ষের ছুটি দুদিন বাড়িয়ে দিয়ে অনেক সরকারি দপ্তরের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতই একই পরিবারের সদস্য এ নভেল করোনাভাইরাস, যারা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে।

তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল হওয়ার দিকে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু।

মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমণের পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। আর এ কারণেই চীনে এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। বছরের এমন এক সময়ে চীনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, যখন চন্দ্রবর্ষের উৎসবে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়ত করে। ফলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগও বেড়ে গেছে অনেক।

ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে হুবেই প্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাস চলাচল একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। হুবেই থেকে যারা বেইজিং বা সাংহাইতে যাচ্ছেন, তাদের ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। যে ১০৬ জনের মৃত্যুর তথ্য এ পর্যন্ত নিশ্চিত করেছেন চীনা কর্মকর্তারা, তাদের মধ্যে ১০০ জনেরই মৃত্যু হয়েছে হুবেই প্রদেশে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭১৪ জন।

আর যে শহর থেকে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই উহান পরিণত হয়েছে প্রায় ভুতুড়ে শহরে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কয়েকটি সুপারশপ ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ। খুব জরুরি কিছু না ঘটলে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। নববর্ষের ছুটির মধ্যে দোকান বন্ধ থাকায় অনেকের ঘরে তৈরি হয়েছে খাবারের সঙ্কট।

সিটি মেয়র অবশ্য জানিয়েছেন, ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের এ শহরের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ ছুটি কাটাতে উহান ছেড়েছেন অবরুদ্ধ দশা শুরু হওয়ার আগেই। আরও কয়েকটি বড় শহরে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রয়েছে। সাংহাই ও হংকংয়ে ডিজনিল্যান্ডও আপাতত বন্ধ । তিব্বতে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাস চীনের বাইরেও অন্তত ১৬টি দেশে পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত পাঁচজনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর চীন ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্র কনসুলেটের কর্মীদেরও সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আরও অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চীনে না যেতে পরামর্শ দিচ্ছে। ফিলিপিন্স চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপান তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চীনে বিশেষ বিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে অন্তত ৪৭ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পেরেছে।

এর মধ্যে থাইল্যান্ডে আটজন; যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে পাঁচজন করে; মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে চারজন করে; ফ্রান্সে তিনজন; ভিয়েতনামে দুইজন এবং নেপাল, কানাডা, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি ও কম্বোডিয়ায় একজন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।

P/B/A/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে