আন্তর্জাতিক রিপোর্ট :ভিন্ন দুটি গোল, ভিন্ন মেজাজের। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধান। কিন্তু রেসিপির কোনো অদলবদল হয়নি। প্রথমে পাওলো দিবালার পা ছুঁয়ে বল দানি আলভেজের কাছে। আলভেজ সেটা রীতিমতো থালায় সাজিয়ে দিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইনের জন্য। দুটি দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড শেষ কাজটুকু সেরে নিলেন। হিগুয়েইনের জোড়া গোলে মোনাকোকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে জুভেন্টাস।বার্সেলোনার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে আসে জুভেন্টাস। সেখানে ফাইনালে যাওয়ার পথে মোনাকোর মতো দল বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা নয় তারকা সমৃদ্ধ জুভিদের বিপক্ষে।ইতিহাস উজ্জীবিত করে রেখেছিলো জুভেন্টাসকে। কারন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের দু’দেখাতে মোনাকোর বিপক্ষে জয় সঙ্গী ছিলো তাদের। সেই সাথে কোয়ার্টারফাইনালে বার্সেলোনাকে রুখে দিয়ে যেভাবে সেমির টিকিট পেয়েছে জুভেন্টাস, তাতে প্রশংসার সাগরে ভাসতে ভাসতে মোনাকোর মাঠে খেলতে নামে তারা।

জুভেন্টাসের উজ্জীবিত হবার যেমন উপাদান ছিলো, তেমনটি আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিলো মোনাকোও। নিজেদের মাঠের সুবিধার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মেই রয়েছে তারা। ফ্রেঞ্চ লিগে শেষ চার ম্যাচের দু’টিতে জিতলেই শিরোপা ঘরে তুলবে মোনাকো। পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে জুভেন্টাসের মুখোমুখি হয় মোনাকো।প্রায় ১৭’হাজার দর্শকের সামনে ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিক মোনাকোকে চেপে ধরে জুভেন্টাস। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টায় ছিলো সফরকারীরা। তাই ২৯ মিনিটে দুর্দান্ত লড়াইয়ের ফসল পেয়ে যায় জুভেন্টাস।আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার পাওলো দিবালার সহায়তা নিয়ে বল পেয়ে যান ব্রাজিলের রাইট ব্যাক দানি আলভেস। সামনে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে দেখে হিগুইয়েনের উদ্দেশ্যে ব্যাকপাস করেন আলভেস। সেখান থেকে দারুন এক শটে গোল করে মোনাকোর দর্শকদের সামনে জুভেন্টাসকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন হিগুইয়েন।এর আগে ২৫ মিনিটে আরও একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন হিগুইয়েন। সেটি নিজের ভুলেই নষ্ট করেছিলেন তিনি। তাই নিষ্প্রভ হিগুইয়েনের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের দেখার ভয় ছিলো জুভেন্টাসের ভক্তদের। কারন এই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ৬২ ম্যাচে মাত্র ১৬ গোল ঝুলিতে ছিলো হিগুইয়েনের।

ম্যাচে হিগুইয়েনের প্রথম গোলে ভক্তদের নেতিবাচক আশংকা দূর হয়। আর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া, মোনাকোও ফিরে আসার পথ খুঁজছিলো। অল্প সময়ের ব্যবধানে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়ে আক্রমনের জুভেন্টাসের রক্ষণদূর্গ ব্যতিব্যস্ত করে রাখে মোনাকো। তবে গোলের দেখা পাচ্ছিলো না তারা। ফলে এক গোলে পিছিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে মোনাকো।যেই লড়াকু মনোভাব নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করেছিলো মোনাকো। দ্বিতীয়ার্ধেও সেই অব্যাহত রেখেছিলো তারা। ফলে কিছুটা ছন্দহীন হয়ে পড়ে জুভেন্টাস। এই সুযোগে ৪৭ মিনিটে গোলের সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়ে যায় মোনাকো। পর্তুগালের মিডফিল্ডার বার্নাদো সিলভার যোগান দেয়া বলে জুভেন্টাসের জালে শট নিয়েছিলেন কলাম্বিয়ার স্ট্রাইকার রাদামেল ফ্যালকাও। কিন্তু সেটি নসাৎ করে দেন জুভেন্টাসের বুড়ো লরক্ষক বুফন।

শুধুমাত্র এটিই নয়, এরপর মোনাকোর আরও অনেকগুলো নিশ্চিত গোল প্রতিহত করেছেন বুফন। ৫১ মিনিটে আবারো আক্রমন রচনা করে মোনাকো। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে জুভেন্টাসের গোলমুখে তীব্র শট নিয়েছিলেন সিলভা। এবারও প্রাচীর হয়ে দাড়িয়েছিলেন বুফন।৫৫ মিনিটে আরও একটি আক্রমন থেকে গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলো মোনাকো। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার ডিব্রিল সিডিবের পাস থেকে স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে দারুন একটি শট নিলেও বাধা হয়ে দাড়ান বুফন। মোনাকোর মুহুর্মুর্হু আক্রমনের মাঝে পাল্টা আক্রমন চালায় জুভেন্টাস।৫৯ মিনিটে করা সেই আক্রমনটি শেষ পর্যন্ত গোলে রুপ নেয়। দিবালা-আলভেসের জুটি বল তৈরি করে দেন হিগুইয়েনকে। আর গোলে রুপ দেন হিগুইয়েন। তাতে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। শেষ পর্যন্ত এই স্কোরই বজায় রাখতে সক্ষম হয় জুভেন্টাস। তাতে জয় দিয়ে মুখে চওড়া হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে জুভেন্টাস।

ম্যাচের আগে কত আলোচনা হিগুয়েইনকে নিয়ে। বড় ম্যাচ এলেই চুপসে যান হিগুয়েইন। বার্সেলোনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালও তো সেটার বড় এক প্রমাণ। কমপক্ষে তিনটি গোল করার সুযোগ নষ্ট করেছেন দুই লেগে। এ রোগ অবশ্য তাঁর পুরোনো! আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিংবা সাবেক দল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বারবারই মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন হিগুয়েইন।আজকের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬২ ম্যাচে মাত্র ১৬ গোল যদি চিত্রটা বোঝাতে না পারে তবে আরেকটি তথ্য দেওয়া যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগে নকআউট পর্বে ২২ ম্যাচে মাত্র ২ গোল ছিল তাঁর, আর দুটি গোলে সতীর্থদের সহযোগিতা করতে পেরেছেন। ৯০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে যাঁকে দলে টেনেছে জুভেন্টাস তাঁর সঙ্গে এমন পরিসংখ্যান একদমই মানায় না।

মোনাকো ম্যাচ দিয়েই যেন জবাব দিতে চাইলেন হিগুয়েইন। ৭৬ মিনিটে মাঠ ছাড়ার আগেই ম্যাচের গল্পটা লিখে ফেলেছেন, কার্ডিফের ফাইনালে নিজের দলের জায়গাটাও প্রায় পাকা করে ফেলেছেন। প্রতিপক্ষের মাঠে দুই গোলের জয়, পরের ম্যাচ নিজেদের মাঠে। যে মাঠে গত ৪৯ ম্যাচ অপরাজিত জুভেন্টাস। কার্ডিফে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের টিকিট কেটে রাখতেই পারেন জুভেন্টাস সমর্থকেরা।

পি/আ/ন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে