ডেস্ক রিপোর্ট :সদর উপজেলায় ২০০১ সালে স্থাপিত উত্তরা ইপিজেড নীলফামারী জেলার সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে কয়েক হাজার পরিবারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। পাশাপাশি ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারে জেলার অর্থনীতি এখন চাঙ্গা। এক যুগ আগেও নীলফামারী ছিল মঙ্গা কবলিত একটি এলাকা। তখন কৃষি নির্ভর জেলাটিতে প্রতি বছরের আশ্বিন-কার্তিক মানে কর্মহীন হয়ে পড়তো এলাকার কৃষি শ্রমিক। আর এই কর্মহীনতায় ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে মঙ্গাক্রান্ত হতো তারা। উত্তরা ইপিজেডের প্রভাবে আজ জেলা থেকে মঙ্গা দূরীভূত।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০০১ সালে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নে ২১২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ইপিজেডটি। সেটির উদ্বোধন করেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে ওই ইপিজেডে ১২টি দেশি-বিদেশী কোম্পানী ১৪০টি প্লটে কারখানা স্থাপন করেছে। এসব কারখানায় কাজ করছে প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী। পাশাপাশি ইপিজেডকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে আরও অসংখ্য দেশি-বিদেশী কারখানা। ওই ইপিজেডে কাজ করেন নীলফামারী জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের হরিবল্লভ গ্রামের দিনমজুর বাবুল চন্দ্র রায়ের (৫০) দুই মেয়ে লক্ষ্মী রাণী রায় (২০) ও স্বরসত্বী রাণী রায় (১৮)। তাদের দুজনের বর্তমান মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার ওপরে।লক্ষী এবং স্বরসতী লেখাপড়া করেছেন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তারা ছোটবেলা থেকে উপলদ্ধি করেছেন সংসারের অভাব-অনটন। এরপর লেখাপড়া ছেড়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে শ্রমিকের কাজে যোগ দেন উত্তরা ইপিজেডে । সেই কাজের আয়ে এগিয়ে আসেন বাবার কষ্ট লাঘবে।
লক্ষ্মী রাণী রায় বলেন, ‘পরিবারের অভাব-অনটন আমাকে এগুতে দেয়নি লেখাপড়ার পথে। ভাতের অভাবে প্রায় সময়ে কচু সেদ্ধ কিংবা পানি খেয়ে মেটাতে হয়েছে ক্ষুধার জ্বালা। আমাদের দুবোনের আয়ে পরিবর্তন হয়েছে সেসব দিনের। পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা।’
লক্ষী চার বছর ধরে কাজ করছেন উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীণ কোম্পানীতে। আর স্বরসতী কাজ করছেন ওই ইপিজেডের ম্যাজেন বিডি লিমিটেডে।
স্বরসতী বলেন, ‘আমাদের আগে কোন নিজের বাড়ির ভিটা ছিল না, এখন ভিটামাটি হয়েছে, টিনের ঘর হয়েছে, আসবাবপত্র কিনেছি, ভাতের চিন্তা করতে হয় না। আগে তাকিয়ে থাকতাম বাবার দিনমজুরীর আয়ের ওপর।’তাদের বাবা বাবুল চন্দ্র রায় (৪০) বলেন,‘আমার মেয়েরা ইপিজেডে কাজ করে অভাব দূর করেছে পরিবারের।’জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের ব্যাঙমারী গ্রামের রিকশাভ্যান চালক আজিনুর ইসলাম (৩০) বলেন, ‘আমার স্ত্রী কমলা বেগম প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছে ইপিজেডের ভ্যানচুরা কারখানায়। প্রতিমাসে তার আয় আট হাজার টাকার ওপরে। ইপিজেড থেকে আমাদের বাড়ি আট কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন সকালে আমার ভ্যানে স্ত্রীকেসহ এলাকার অন্যান্য শ্রমিকদের আনা নেয়া করি আমি। তাতে মাসে আমারও আয় হয় সাত থেকে আট হাজার টাকা। এখন খরচ বাদে সঞ্চয় হচ্ছে, তিন সন্তান স্কুলে যাচ্ছে।’একই ইউনিয়নের ব্যাঙমারী গ্রামের লাকী আক্তার (২৫) বললে, ‘২০০৯ সালে আমার বিয়ের পর দেখেছি স্বামীর আয়ে সংসার চলতো না। এখন আমি কাজ করি সনিক কোম্পানীতে। স্বামী কাজ করেন একটি সিরামিক কারখানায়। আমাদের দুজনের আয়ে সংসার ভালোই চলছে। এক ছেলে এক মেয়েকে স্কুলে লেখাপড়া করাচ্ছি।’
শুধু তাই নয়, উত্তরা ইপিজে জেলার অনেকের জুটেছে কর্মসংস্থান, ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তাদের বেড়েছে আয়, পরিবর্তন হয়েছে জীবন মানের।
উত্তরা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. তানভীর হোসেন বলেন,‘২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা ইপিজেডের উদ্বোধন করেন। এখানে বর্তমানে ১৪০টি প্লটে ১২ টি কোম্পানী কারখানা স্থাপন করে রপ্তানীযোগ্য পণ্য উৎপাদন করছে। এর মধ্যে সাতটি কোম্পানী বিদেশি। বর্তমানে কর্মরত ২২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশী, প্রস্তুত করা আরো ৪০টি প্লটের মধ্যে বেশিরভাগ ইতোমধ্যেই বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেগুলো চালু হলে শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।তিনি বলেন, ইপিজেডে মোট বিনিয়োগের পরিমান ১৩০ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী হয়েছে ৪৫৭ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে অন্যান্য ইপিজেডের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ম বলেন, এলাকায় এক সময়ে বছরের বেশিরভাগ সময় কৃষি শ্রমিকদের কাজ থাকতো না। আর নারীরা ঘরে বসে দিন কাটাতো। এখন নারী পুরুষ সমানভাবে শিল্পকারখানায় কাজ করছে। ওই ইপিজেডকে ঘিরে জেলার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কারখানা। ইপিজেড ঘিরে ব্যবসা বানিজ্য ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে