আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থায়ন নিয়ে হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস সদস্যদের মতবিরোধে আংশিক অচল হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার দিনের শুরু থেকে এ আংশিক অচলাবস্থা কার্যকর হয়েছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের সব বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের একটি বিল অনুমোদন করেছিল।

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। ট্রাম্প ওই বাজেট বিলে দেয়াল নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত ৫৭০ কোটি ডলার অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্টের এ চাহিদার সঙ্গে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের মতবিরোধে জেরে শুক্রবার কংগ্রেসের নেতারা ও হোয়াইট হাউস বাজেট নিয়ে চুক্তিতে আসতে ব্যর্থ হয়। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আংশিক অচলের কবলে পড়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকার।

ক্রিসমাসের ছুটি শুরু হওয়ার আগে অচলাবস্থা অবসানের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেসের নেতারা ও হোয়াইট হাউস।

এ আংশিক অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র, যাতায়াত, কৃষি, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল পার্ক অ্যান্ড ফরেস্ট বিভাগের লাখ লাখ কর্মী বেকার হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান আধিপত্য থাকার পরও দেয়াল নির্মাণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে ট্রাম্পের ক্রুদ্ধ হওয়ার পেছনে ভয়ও কাজ করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে ডেমোক্রেটরা প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পাওয়ায় আগামী বছরের শুরু থেকে নিম্নকক্ষে যে কোনো বিল অনুমোদন করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশ বেগ পেতে হবে।

প্রতিনিধি পরিষদের অনুমোদন পাওয়ার পর প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য বাজেট বিলটিকে সিনেট ঘুরে যেতে হবে, সেখানে পেতে হবে ন্যুনতম ৬০ ভোট। উচ্চকক্ষে রিপাবলিকানরা সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বাজেট অনুমোদনে অন্তত কয়েকজন ডেমোক্রেট সিনেটরের সায় লাগবে।

শুক্রবার এ নিয়েই দিনভর উত্তেজনা চলে ক্যাপিটল হিলে। ডেমোক্রেটরা যদি সহায়তায় রাজি না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থা ‘দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে’ বলেও সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

টুইটারে মেক্সিকো সীমান্তে নির্মাণ করতে চাওয়া দেয়ালটির একটি নকশাও দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে সীমান্তে ওই দেয়াল নির্মাণ এবং এর খরচ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়েরও প্রতিশ্রুতি ছিল তার।

মেক্সিকো শুরু থেকেই দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারাও বলছেন, মার্কিন জনগণের করের টাকায় ট্রাম্পকে দেয়াল নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। শুক্রবার একেবারে শেষ মুহুর্তে কংগ্রেস সদস্যরা অচলাবস্থা কাটাতে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

শনিবার এ নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ফের আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জটিলতা এড়াতে ট্রাম্প সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেলকে ‘নিউক্লিয়ার অপশন’ নামে একটি প্রক্রিয়া চালুর আহ্বান জানান।

এটি চালু হলে সিনেটে বিল পাসের ক্ষেত্রে ৬০ ভোটের বিধান উঠে যাবে। তখন যে কোনো বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটরদের মতই তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা যায়।

ম্যাককনেল তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের আহ্বান বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছে বিবিসি। যদিও আগে ট্রাম্পের এ ধরনের বেশকয়েকটি আহ্বানে তিনি সাড়া দেননি।

কেবল ডেমোক্রেটরাই নয়, রিপাবলিকান সিনেটরদের কয়েকজনও ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের বিরোধী হওয়ায় শনিবারই অচলাবস্থার মীমাংসা হচ্ছে না বলেও ধারণা করছেন অনেকে। বড়দিনের ছুটির আগে আগে এ পরিস্থিতির জন্য ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরও কমতে পারে বলেও অনুমান তাদের।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে