জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মেয়ে সেই চাঁদনীর ফের কপাল পুড়লো।

বিয়ের তিন মাসের মাথায় স্বামী আলম হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। শোকাহত নববধু চাঁদনী বাবার বাড়িতে এখন নিস্তব্ধ একাকী জীবনযাপন করছে। সংবাদকর্মী বা প্রতিবেশীদের সাথে সাক্ষাত করছেন না। ফলে দূর্ঘটনার এ সংবাদটি সংবাদকর্মীদের হাতে দেরিতে আসে।

পারিবারিক সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চাঁদনীর শুভ বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বর আলম হোসেন সৈয়দপুর শহরের মরহুম জয়নুল আবেদীন ও হাসিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। আলম পেশায় ঢাকায় সাভারের একটি কাগজ মিলের শ্রমিক। এক লাখ ৫১ হাজার টাকা দেনমোহরে অনুষ্ঠিত বিয়েতে আমন্ত্রিতরা সকলেই কনর চাঁদনীকে আর্শীবাদ করেন। কিন্তু চাঁদনীর কপালে সেই সুখ বেশি দিন টিকেনি। মাত্র তিন মাসের মাথায় গত ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আলম হোসেন।

চাঁদনীর বাবা কায়সার আলী বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র। বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে অনেক পরিশ্রম করে টাকা পয়সা জমা করেছিলাম। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারী বাসায় সংঘটিত আগুনে ওই জমানো টাকা পয়সা পুড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিয়ের সকল আয়োজন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এবং বর পক্ষের সহানুভূতি ও দেশের বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন জামাতাকে হারিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে আবার মনঃকষ্ট সঙ্গের সাথী হলো।

চাঁদনীর ছোট বোন অনার্স পড়ুয়া নওশীন আকতার সিসি নিউজকে জানান, দুলাভাই এক সপ্তাহ ধরে জন্ডিস ও কিডনি জনিত রোগে ভুগছিলেন। ঘটনার দিন মধ্যরাতে হঠাৎ করে অসুস্থ্যতা বেড়ে গেলে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ভোর ৫টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। তিনি বলেন, বোনের পেটে বাচ্চা রয়েছে। আমার বোন ওই শিশুকে নিয়েই বাকী জীবনটা কাটাতে চায়।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পুরাতন মুন্সিপাড়ায় এক ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে কাওসার আলী ও মোছা. ইয়াসমিন দম্পতির বড় মেয়ে চাঁদনীর জন্য বিয়ের জমানো টাকা পুড়ে যায়। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে মো. আলমের সাথে চাঁদনীর বিয়ের দিন ধার্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই আগুনে টাকা পুড়ে যাওয়ায় বিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির অনার্স পড়ুয়া ছোট মেয়ে নওশীন আকতারের বই পুস্তক, পোষাক সহ লেখাপড়ার বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে তাঁর লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নজরে আসে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। তারা চাঁদনীর বিয়ে ও নওশিনের লেখাপড়ার জন্য পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে