sirajgong flood

বিডি নীয়ালা নিউজ (২৬ই জুলাই  ২০১৬) মারুফ সরকার (বিভাগীয় প্রতিনিধি): পাহাড়ি ঢল ও প্রবাল বর্ষনে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীরবর্তী চৌহালী,বেলকুচি,শাহজাদপুর,কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার  ২৯টি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে।জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন কক্ষ রুম খোলা হয়েছে।সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার খুকনিতে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওই থানার খুকনীতে বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে খেলতে গিয়ে অথৈ পানিতে তলিয়ে এদের মৃত্যু হয়।  মৃত শিশুরা হলো, খুকনী গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী খোরশেদ আলীর ছেলে আবু হুরায়রা (৩) ও তাঁত শ্রমিক ফুলচাঁন আলীর মেয়ে ফাইমা খাতুন (২)। তারা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নী। এনায়েতপুর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল হালিম জানান, খেলার ছলে বাড়ির পাশের বন্যার পানিতে নেমে পড়ে অথৈই পানিতে তলিয়ে যায়। এর পর বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজা-খুঁজি করেও তাদের পায়নি।বিকেলে তাদের লাশ পানিতে ভেসে উঠলে স্বজনরা তা উদ্ধার করে।এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৭সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যুমনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।জেলা  ত্রাণ ও দুর্যোগ অফিস সুত্রে জানাযায়, কাজিপুর উপজেলার ৯টি, সদর উপজেলার ৫টি, বেলকুচির ৩টি, চৌহালীর ৭টি ও শাহজাদপুরের ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে এসব অঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি। সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, এ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কাজিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল হালিম জানান, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পুরোপুরি ও ৩টি ইউনিয়ন আংশিক চরাঞ্চল। এ কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। চৌহালী ইউএনও রেজাউল বারী জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ উপজেলার এনায়েতপুরে নদীর তীরবর্তী বামন গ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায়ই বন্যার পানি ঢুকেছে।  সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন,গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও এ মূহুর্তে যমুনার ডান তীরের বাঁধগুলো মোটামুটি সুরক্ষিত আছে। কিন্তু পশ্চিম পাড়ে ঘূর্ণাবর্তের পরিমান ক্রমশই বাড়ছে। যে কারণে সদর ও চৌহালী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কিছু অংশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।জেলা প্রশাসক মো.বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে শাহজাদপুরে ৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কাজিপুরে ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতেও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা জানান,পৌর এলাকার যে সকল নি¤œ এলাকায় যমুনার পানি প্রবেশ করেছে সেই এলাকাতে পৌরসভার পক্ষ থেকে মানুষের যাতায়াতের জন্য দেয়া হয়েছে নৌকা। তিনি আরো জানান পরিস্তিতি বুঝে ওই সকল এলাকায় সকল প্রকার সাহায়তা দেয়া হবে।জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উদ্দিন বন্যা কবলিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাত দিয়ে জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ২৬টি ইউনিয়নের ৯২টি গ্রামের কমপক্ষে ৩ হাজার পরিবারের ১৪ হাজার লোকজন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, ৬৬২টি বাড়িঘর আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান,বন্যার্তদের ১৩৯টি কেন্দ্রে আশ্রায় দেওয়া হয়েছে। ৫টি উপজেলায় ৬৫ মেট্রিক টন ক্ষয়রাতি চাল এবং ৩ লাখ নগদ টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে। জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হয়েছে বলে তিনি জানান ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে