আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসানসোলে রামনবমীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় সিবতুল্লা রাশিদি নামে এক কিশোরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার পরও কিশোরটির বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রাশিদি সম্প্রীতি রক্ষার অনন্য নজির তৈরি করেছেন। ছেলের মৃত্যুর শোকে কাতর থাকলেও তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি। বরং শান্তি বজায় রাখতে শহরবাসীকে তিনি জানিয়েছেন, ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে যদি কোন পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে, তবে এই শহর এবং মসজিদের দায়িত্ব ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন তিনি। রামনবমীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় যখন অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতে শোকাগ্রস্থ বাবার এই সম্প্রীতির বাণী সত্যিই প্রশংসনীয়।

জানা যায়, রামনবনীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত রবিবার থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ শহরে দুইটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। ক্রমশ সেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে আসানসোলে। মঙ্গলবার রাত থেকে পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়। বোমা, গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা শহর। ওই দিন সন্ধ্যাবেলায় আসানসোলের রেলপাড় এলাকা থেকে মওলানা ইমদাদুলের ছোট ছেলে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিবগাতুল্লা রশিদি (১৬) নিখোঁজ হয়ে যায় বলে খবর। বুধবার গভীর রাতে একটি লাশ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষে রশিদির লাশকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর শুক্রবার স্থানীয় ইদগাহ ময়দানে দাফন করা হয় সিবগাতুল্লাহকে। পরে ওই ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ছেলের জানাজায় অংশ নিতে আসা সমাবেশ স্থল থেকে শান্তির বার্তা দেন মওলানা ইমদাদুল।

গত ত্রিশ বছর ধরে আসানসোলের চেতলাডাঙ্গা নদী পাড়ের নুরানি মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসা ইমদাদুল এসময় বলেন, ‘আমার ছেলে নিহত হয়েছে কিন্তু আমি শান্তি চাই। আমি আর কোন ব্যক্তির সন্তানের মৃত্যু দেখতে চাই না। আমার ছেলের মৃত্যুর পর যদি পাল্টা হামলা চালানো হয় তবে আমি এই আসানসোল শহর ছেড়ে চলে যাবো’।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবারের জমায়েত থেকেও এই একই আবেদন রেখেছিলাম। আমি তাদের বলেছিলাম যে আপনারা যদি আমায় ভালোবাসেন, তবে আপনারা আপনাদের আঙুল তুলবেন না। গত ত্রিশ বছর ধরে আমি ইমাদের দায়িত্ব পালন করে আসছি। সেক্ষেত্রে মানুষকে সঠিক বার্তা বা শান্তির বার্তা দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। আসানসোল-দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনার এল.এন. মীনা জানান ‘আমাদের প্রথম কাজই হল এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে’।

স্থানীয় মানুষ ও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারাও আশাবাদী যে ইমামের এই আবেদনের ফলে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে অনেক সহায়তা করবে। যদিও তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।

তৃণমূলের আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস ব্যানার্জি জানান, ‘এটা এখনও পরিস্কার নয় যে, গোষ্ঠী সংঘর্ষেই সিবতুল্লার মৃত্যু হয়েছিল না এর পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। তবে শান্তি বজায় রাখার জন্য ইমাম যে আবেদন রেখেছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য’।

এদিকে ইমামের এই ভূমিকার ভূয়ষী প্রশংসা করে ভারত রত্নের জন্য সুপারিশের করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তৃণমূলের সাবেক লোকসভার সাংসদ কবীর সুমন। ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তিনি জানান ‘আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমামের জন্য ভারতরত্ন দাবি করো। এই মুহূর্তে ইমামকে গণসম্মান দেওয়া হোক। আমরা সকলে তাঁকে প্রণাম করবো’।

আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘ক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করতে ও প্রশাসনকে সাহায্য করতে ইমাম খুবই দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। আমরা তার জন্য গর্বিত। ছেলে হারানোর পরও তিনি শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন’।

রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অশান্তি ঠেকাতে ইতিমধ্যেই নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন মমতা ব্যানার্জি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসানসোলে তিন সিনিয়র (আইপিএস) পুলিশ কর্মকর্তাকেও পাঠান মমতা। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা, একাধিক জায়গায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।

 

 

 

 

 

 

 

B/D/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে