সোহেল রানা রাজশাহী: প্রকাশ্য বিভক্তি দেখা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে। গত ০৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা কৃষকলীগের সম্মেলন উপলক্ষে হওয়া ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও হামলাকে কেন্দ্র করে উতপ্ত হয়েছে আ.লীগের রাজনীতি। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ থাকলেও, সেদিনই প্রকাশ্যে এসেছে আ.লীগের রাজনৈতিক কোন্দল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলার ঘটনায় অশনি সংকেত দিচ্ছে জেলার রাজনীতিতে।

অভিযোগ রয়েছে,ঢাকায় কর্মরত জেলার এক প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে তৃনমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষের একটি গ্রুপ। জেলায় যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান। খোদ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামেই দেয়া হচ্ছে মামলা হামলা মামলার বাদিও হচ্ছেন অনেকেই বাড়ি ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ের মালা পড়ে তাদের ঘনিষ্ঠরা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই জড়িত।

এমন পরিস্থিতি নিজেদেরকে অনিরাপদ অনুভব করছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন,স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই গ্রুপটি। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ,শ্রমিকলীগের নেতৃত্ব দখলে নিয়েছে জেলা শহর তারা।

এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন,ওই উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে মেয়র মোখলেসুর রহমান। বিএনপি-জামাতের লোকজনকে পাশে নিয়ে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামেই মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। কৃষকলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দিনভর ককটেল বিস্ফোরন,হামলার পর রাতে আমার অফিসে বাসভবনেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দেয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে,মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু সকল তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও কি পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহায়তা পাওয়া যাবে না। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে হামলার ঘটনাতেও যদি পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়া যায়, তাহলে সাধারন মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, পুলিশ কোনভাবেই শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন না। তারা বলছেন,উপরের নির্দেশে আমরা এমন করছি। তাহলে কি সেই পুলিশ কর্মকর্তা জননেত্রী শেখ হাসিনার থেকেও বড় নেতা?

সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ বলেন,২ মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সাথে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও সঠিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার পেছনে ওই এক পুলিশ কর্মকর্তাই দায়ী। তার এমন কর্মকান্ডের কারণে বর্তমানে জেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতারা আশঙ্কা করছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নৌকার পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথচ ক্ষমতার লোভে তারা দলকে আজ দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে ফেলেছে।

আব্দুল ওদুদ বলেন, এক্ষেত্রে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তাছাড়া যতই দিন যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগে দ্বিধা বিভক্ত হওয়ায় এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নীতিবিরোধী এমন কর্মকান্ডের কারণে বিতর্কিত হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকান্ড। ঘরে ঘরে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খবর পৌঁছে দেয়ার বিপরীতে এমন গর্হিত কাজের ফলে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, আওয়ামীলীগ বড় ও জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এখানে পদ প্রত্যাশী অনেকেই থাকবে ও সেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর সূত্র ধরে জেলা আওয়ামীলীগকে কোনঠাসা করে অসুস্থ নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা করা সম্পূর্ণ বোকামি।

তিনি আরও বলেন,যে বা যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগকে বির্তকিত করতে দলের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি করছে,অরাজকতা করছে,তাদের পরিনতিও ভয়াবহ হবে। প্রধানমন্ত্রী জেনে-বুঝেই জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সীধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা অপরাজনীতি করতে চাই, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়গুলো সার্বিকভাবেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে।

গত ০৫ ডিসেম্বর জেলা কৃষকলীগের সম্মেলনে হামলার শিকার হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজ। বর্তমানে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে বিশ্রামে রয়েছেন তিনি৷ নিজে মার খেয়ে উল্টো দুইটি মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। এবিষয়ে ঘটনার দিনের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন,সম্মেলনস্থলে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এমনকি সম্মেলনস্থলে যোগ দিতে পথে ছিলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খাইরুজ্জামান লিটন। কিন্তু সামনের সিটে বসা কে কেন্দ্র করে ঝামেলা বাধানো হয়।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। এখনো শরীরে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। অথচ আমার নামে দুইটি মামলা দেয়া হয়েছে কিছু জানিনা, কারন আমি নিজেই হামলার স্বীকার। বিএনপি জামাতের লোকজন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়ে হামলা মামলার পথ বেছে নিয়েছে তারা। এর আগেও বারবার তাদেরকে অনু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে