নিউ জিল্যান্ডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয় অধরাই রইল। এখানে এসে প্রথম ম্যাচে জেতা ভীষণ কঠিনও। তবে লড়াইয়ের আশা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি ছিল না! বাংলাদেশ করতে পারল না সেটুকুও।

প্রথম ওয়ানডেতে ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশকে ৭৭ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ড ৩৪১ রান তুলেছিল কিউইরা। মাশরাফিরা গুটিয়ে যায় ২৬৪ রানে।

এমনিতে ২৬৪ রান খারাপ মনে হয় না। তবে সত্যি বলতে রান তাড়ায় অনেক আগেই ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচের ফল বুঝতে পেরে ইনিংসের মাঝপথেই অর্ধেক খালি হয়ে যায় গ্যালারি।

চোট কাটিয়ে অনুমিতভবেই ফিরেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরু আর শেষে উইকেটও নিয়েছেন। তবে দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম ম্যচে স্বাভাবিকভাবেই বোলিংয়ে ছিল কিছুটা জড়তা। ধারহীন অন্য বোলাররাও। বাজে বোলিং আর ব্যাটিং সহায়ক উইকেট কাজে লাগিয়ে অসাধারণ সেঞ্চুরি উপহার দেন টম ল্যাথাম। কলিন মানরোর ব্যাটে ছিল ঝড়।

ফিল্ডিং আর শরীরী ভাষাও ছিল না খুব সুবিধের। সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেকরা। পরে ব্যাটসম্যানরা চাপা পড়েছে সেই রান পাহাড়ের নীচে। এলোমেলো শটে সহজ করে দিয়েছে কিউইদের কাজ।

মার্টিন গাপটিল বা উইলিয়ামসনকে নিয়েই ভয় ছিল বেশি। কিন্তু অতীতের আরও অনেকবারের মত বাংলাদেশকে ভোগালেন আড়ালের একজন। কদিন আগেই ভারতের বিপক্ষে আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের নজির গড়েছিলেন ল্যাথাম। এদিনও শুরুতে নেমে খেললেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। ৪৮তম ওভারে যখন ফিরছেন, নামের পাশে ১২১ বলে ১৩৭ রান। দাঁড়িয়ে তখন হ্যাগলি ওভালের প্রায় সব দর্শক।

মানরো ওয়ানডেতে সবশেষ অর্ধশতক করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষেই। সেই ২০১৩ সালে। ফতুল্লায় ৭৭ বলে ৮৫ রানের সেই ইনিংস ছাপিয়ে এবার করলেন ৬১ বলে ৮৭! ১৫৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। পঞ্চম জুটিতে এই দুজন তুলেছেন আরও ১৫৮ রান, মাত্র ১০৭ বলে!

এই জুটির আগ পর্যন্ত কিছুটা হলেও ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। গাপটিলকে স্লোয়ারে ফেরান মুস্তাফিজ। দারুণ শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি উইলিয়ামসন। সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহর হতে জীবন পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি ৬ বছরেরও পর ওয়ানডেতে ফেরা নিল ব্রুম। স্কিড করা বলে ব্রুমকে এলবিডব্লিউ করার পর একইভাবে জিমি নিশামকেও ফেরান সাকিব।

দুজনের ১৫৮ রানের জুটি যে কোনো উইকেটেই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ।

শেষ ১০ ওভারে রান আসে ১০৩। ৭ উইকেটে ৩৪১ রান বাংলাদেশের বিপক্ষে কিউইদের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ৩৩৮ ছিল সেই ১৯৯০ সালে শারজায়, দুই দলের যেটি ছিল প্রথম দেখা!

এই হ্যাগলি ওভালেরও ৩৪১ সর্বোচ্চ রান।

উইকেট বোলারদের জন্য কঠিন ছিল। তবে নিজেদের কাজটাও করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। পেসারটা শর্ট বল করেছেন অনেক, লাইন-লেংথ হারিয়েছেন প্রায়ই। স্পিনারদের জন্য পিচে ছিল না কিছুই। রান বেশ গুণলেও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে সাকিব তবু নিতে পেরেছেন ৩ উইকেট।

বোলারদের বিবর্ণ দিনে আলো ছড়তে পারেনি ব্যাটিংও। কটবিহাইন্ড হয়েও বিস্ময়করভাবে রিভিউ নিয়ে ফিরলেন ইমরুল কায়েস। আস্থার প্রতিদান দিতে আরও একবার ব্যর্থ সৌম্য। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকেও ছন্দ পেলেন না তামিম।

শেষ দিকে দারুণ কিছু শটে মোসাদ্দেক হোসেন পেয়েছেন প্রথম অর্ধশতকের স্বাদ। তার ইনিংসটায় পরাজয়ের ব্যবধান নেমেছে তিন অঙ্কের নিচে। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধানটা বেড়েছে আরও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৪১/৭ (ল্যাথাম ১৩৭, গাপটিল ১৫, উইলিয়ামসন ৩১, ব্রুম ২২, নিশাম ১২, মানরো ৮৭, রনকি ৫, স্যান্টনার ৮*, সাউদি ৭*; মাশরাফি ০/৬১, মুস্তাফিজ ২/৬২, তাসকিন ২/৭০, সাকিব ৩/৬৯, সৌম্য ০/২৫, মোসাদ্দেক ০/৪০)।

বাংলাদেশ: ৪৪.৫ ওভারে ২৬৪ (তামিম ৩৮, ইমরুল ১৬, সৌম্য ১, মাহমুদউল্লাহ ০, সাকিব ৫৯, মুশফিক ৪২ (আহত অবসর), সাব্বির ১৬, মোসাদ্দেক ৫০*, মাশরাফি ১৪, তাসকিন ২, মুস্তাফিজ ০; বোল্ট ০/৪৩, সাউদি ২/৬৪, ফার্গুসন ৩/৫৪, নিশাম ৩/৩৬, স্যান্টনার ১/৬১)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: টম ল্যাথাম

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে