bretrn

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৫ই জুন ২০১৬ইং)-আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। যারা ছাড়ার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল – সেই ‘লিভ’ শিবির জনগণকে তাদের পক্ষে টানল কোন্ যুক্তি দেখিয়ে?

১. ব্রেক্সিটের নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাবে উল্টো ফল

ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেনের মানুষ আরও গরীব হয়ে যাবে প্রচারণা পর্বে এমন হুঁশিয়ারি মানুষ ক্রমাগত শুনেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয় মানুষ তা বিশ্বাস করে নি অথবা মনে করেছে সেই ঝুঁকি নিতে তারা প্রস্তুত।

বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আইএমএফ, ওইসিডি, ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিবিআই, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড-এর শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করেছেন ইইউ ছাড়লে প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে, বেকারত্ব বাড়বে, পাউন্ডের দরপতন হবে, দেশ মন্দায় ডুববে, ব্যবসা লালবাতি জ্বালবে, কর বাড়বে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমবে। এমনকী এই হুঁশিয়ারিতে কন্ঠ মিলিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামাও।

‘রিমেইন’ শিবিরের কেউ কেউ বলেছেন এই নেতিবাচক প্রচারণা ”একটু বাড়াবাড়ি” হয়ে গেছে। জনগণ হয় তাদের বিশ্বাস করে নি, নয়ত শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে এটা তাদের বিদ্রোহের পরিচয়।

২. স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রতিশ্রুতি

‘লিভ ক্যাম্পেন’-এর স্লোগান ছিল ইইউ ছাড়লে সপ্তাহে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ বাঁচবে -যে অর্থ তারা বলেছে এখন ইইউকে দিতে হচ্ছে – এই অর্থ স্বাস্থ্য-সেবা খাতে বরাদ্দ করা যাবে।

এমন আকর্ষণীয় স্লোগান সব বয়সের, সব রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষকে টেনেছে আর প্রচারণা বাসে এই স্লোগান ভোটারদের ইইউ ছাড়তে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে।

‘রিমেইন ক্যাম্প’ বারবার বলার চেষ্টা করেছে -এ পরিসংখ্যানের ভিত্তি ভুল- বাসের গা থেকে এই মিথ্যা তুলে নেওয়া হোক্। সেটা তো হয়ই নি, উল্টে এই প্রচারণায় সব মানুষের মনে গেঁথে যাওয়া পরিসংখ্যানটি ছিল ৩৫০ মিলিয়ন।

৩. অভিবাসন ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারণী বিষয়

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্রিটেন ব্যর্থ এই অভিযোগ তোলেন নাইেজল ফারাজ

ইইউ বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজ-এর অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য এই প্রচারণায় ‘লিভ ক্যাম্প’-এর জন্য হয়ে উঠেছিল তুরুপের তাস।

জাতীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি ও ঐতিহ্যের বিষয়টি বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। গত ১০ বছরে ব্রিটেনে ব্যাপক সংখ্যায় অভিবাসী আসা নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক জীবনে তাদের প্রভাব, এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী বিশ বছরে কী হবে- এসব তুলে ধরে সফল প্রচার চালিয়েছে ‘লিভ ক্যাম্প’। এর ফলে ইইউ-তে থাকার বিপক্ষে একটা শক্ত জনমত গড়ে তুলতে তারা সফল হয়েছে।

অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়েছে কঠিন ভাষা আর ছবি- এসব নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও ভোটারদের ইইউ ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থির করতে সাহায্য করেছে এইসব প্রচারণা।

৪. জনগণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয় নি

প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আহ্বানে সাড়া দেয় নি অনেক মানুষ

ডেভিড ক্যামেরন দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে জিতেছেন, একটা গণভোটেও জয়ের সাফল্য তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এবারে ভাগ্য তার বিপক্ষে গেছে। ‘রিমেইন ক্যাম্প’-এ নেতৃত্ব দিয়ে এবং এর মধ্যমণি হয়ে তিনি তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত ও ব্যক্তিগত সম্মানকে বাজি রেখেছিলেন।

ইইউ-র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন আনতে নয় মাস ধরে তিনি যে দেন-দরবার চালান, তা অসার বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন তার দলেরই ইইউ বিরোধী সদস্যরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ব্রিটেনের ভবিষ্যতের জন্য কেন সুফল বয়ে আনবে, প্রচারণায় তা তিনি বারবার জোরের সঙ্গে তুলে ধরলেও যেসব ভোটার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর কথাকে শেষ পর্যন্ত আমল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

৫. লেবার পার্টি ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে

‘রিমেইন ক্যাম্প’-এ যারা প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তাদের জেতার জন্য অপরিহার্য ছিল লেবার সমর্থকদের পাশে পাওয়া।

লেবার সমর্থকদের শতকরা ৯০ভাগই ছিল ইইউতে থাকার পক্ষে। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রচারণা চালানোর তেমন উদ্যোগ দেখা যায় নি।

গর্ডন ব্রাউন, সাদিক খান, অ্যালান জনসনের মত শীর্ষ লেবার নেতারা ব্রিটেনের ইইউতে থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে কিছু প্রচারণা চালালেও লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন দলের সমর্থকদের যথেষ্ট উদ্বুদ্ধ করতে পারেন নি বলে কিছু মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

৬. প্রচারণায় বরিস জনসন এবং মাইকেল গভের মত ব্যক্তিত্ব

বরিস জনসন

কনজারভেটিভ পার্টির কয়েকজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী ব্রেক্সিট অর্থাৎ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে এটা সবাই জানতেন, কিন্তু দলের দুই বড় নেতা লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন এবং বিচারমন্ত্রী মাইকেল গভ এই ব্রেক্সিট শিবিরে যোগ দেওয়ায় ‘লিভ ক্যাম্পেন’ নতুন মাত্রা পেয়েছিল।

জনগণের কাছে মাইকেল গভ-এর আকর্ষণ ছিল বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসাবে আর বরিস জনসন ছিলেন তারকা রাজনীতিক।

৭. বয়স্ক মানুষরা বেশি ভোট দিয়েছেন

বয়স্কদের মধ্যে ইইউ ছাড়ার প্রবণতা ছিল বেশি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বয়স্ক মানুষদের ভোট ‘লিভ ক্যাম্পেন’কে জয়যুক্ত করতে সাহায্য করেছে – বিশেষ করে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম, মিডল্যান্ডস এবং উত্তর পূর্ব ইংল্যান্ডে।

এমনিতেই বয়স্ক মানুষের মধ্যে ভোট দেবার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, কিন্তু এই গণভোটে দেখা গেছে ৫৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যেই ব্রেক্সিট সমর্থকের সংখ্যা বেশি।

৬৫ উর্ধ্ব ভোটারদের প্রতি ৫ জনের ৩ জনই বলেছেন তারা ইইউ-তে থাকার বিপক্ষে।

৮. ইউরোপ ব্রিটেনের মানুষের কাছে সবসময়ই ছিল বিদেশ

ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কখনই সহজ ছিল না।

ইউরোপীয় কমিউনিটিতে যোগ দিতেও ব্রিটেন অনেক বছর সময় নিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে যখন এ নিয়ে গণভোট হয়েছিল তখনও অনেকেই এটাকে সমর্থন জানিয়েছিল কিছুটা প্রতিবাদের সঙ্গে এবং শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাভের আশায়।

বলা হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে, তবে ভোটের ফলাফল যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে ততক্ষণ বোঝা যাবে না কত শতাংশ বয়স্ক আর কত শতাংশ তরুণ পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে