jongi

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৭ই  মে১৬) ডেস্ক রিপোর্টঃ  পুলিশ সম্প্রতি যে ছয়জনের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে তারা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার সদস্য। এদের বিরুদ্ধে ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশকদের ধারাবাহিক হত্যায় জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবিটি বর্তমানে ছোট ছোট দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে সারাদেশে হত্যা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। পলাতক এ ছয়জন হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। এরপর আবারো উপদলে মিলিত হয়। ছয়জনের মধ্যে কয়েকজনকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খুঁজছিল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের অবস্থান জানতে না পেরে অবশেষে তাদের ধরিয়ে দেয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

এর আগে এবিটির আরেক সংগঠন রেদোয়ানুল আজাদ রানার ছবি প্রকাশ করে তাকে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএিমপি)। রানা ছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
ডিএমপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবিটির আরো ৩০ জন পলাতক সন্দেহভাজনের তালিকা করেছেন তারা। শিগগিরই আরো কয়েকজন জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে এবিটির এই ছয় জঙ্গির বিরুদ্ধে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বমোট ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ছবি প্রকাশ করা হয়। ডিএমপি নিউজে তাদের ছবি ও নাম বর্ণনাসহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করে পুলিশ তাদের সম্পর্কে যেকোনো তথ্য দেয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে ছয় জঙ্গি বিভিন্ন ছদ্মবেশে অপরেশনাল কাজে অংশ নিলেও তাদের ধরা যাচ্ছে না। সর্বশেষ রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ-তনয়কে হত্যা করেছে তারা। এদের প্রত্যেকের একাধিক ছদ্ম নাম রয়েছে। তাই পুলিশ যে নামে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে ঘোষণা দিয়েছে ওই নামে তাদের কেউ চিনে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এসব জঙ্গিদের ধরতে ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েও তাদের খোঁজ মেলেনি। সম্ভাব্য জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হলেও বরাবরই তারা অধরাই রয়েছে।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে  বলেন, ‘অনেক অভিযান চালিয়ে না পাওয়া এখন সন্দেহভাজন খুনিদের ছবি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই আরো কয়েকজনের তথ্য প্রকাশ করা হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সম্প্রতি বলেন, ‘ব্লগার, প্রকাশক হত্যায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে। যার ১৬টিতে দোষীদের শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।’ অভিজিৎ রায় ও ফয়সল আরেফিন দীপনের হত্যাকারীদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার বলেন, ‘ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ টিমের ছয় জঙ্গিকে সনাক্ত করা করা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ছয় জঙ্গির ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব জঙ্গিরা যাতে আকাশ, স্থল কিংবা নৌপথে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সতর্কতা জাড়ি করা হয়েছে। এদের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে দেশে ব্লগারসহ ভিন্নমতাবলম্বী খুন হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডে এদের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। এদের ধরতে তাই চেষ্টা চলছে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই তদন্তের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাড্ডার সাঁতারকুল ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এবিটির দু’টি আস্তানায় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে সেখান থেকে এবিটির দুই সদস্য গ্রেপ্তার হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়।

পরে গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য ও সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে ওই সংগঠনের আরো দু’টি আস্তানার সন্ধান ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে পাওয়া যায়। এর মধ্যে দক্ষিণখানের আস্তানাটি বোমা তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ওইসব অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য, চলমান মামলার তদন্ত ও পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তারকৃত অন্য আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়া সাম্প্রতিক অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এবিটির ৩১ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। প্রায় এক বছর আগে অভিজিৎ হত্যার কয়েক খুনির ছবি পায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের নাম ও স্বচ্ছ ছবি হাতে আসে। এরপর ঘটে যাওয়া নিলয়, অনন্ত বিজয়, দীপন, নাজিমউদ্দিন ও কলাবাগানের জোড়া খুনে জড়িতদের ব্যাপারেও তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর পুলিশে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনের পর এই তদন্ত প্রক্রিয়া আরো এগিয়েছে। তারা সন্দেহভাজন খুনিদের ওপর গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এর ফলে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার এবং পলাতক আরো কয়েকজন এবিটি সদস্যের নাম-পরিচয় জানা গেছে। এখন পর্যন্ত পলাতক আরো ৩০ জনের তথ্য সংগ্রহ করা গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

এ দফায় পুরস্কার ঘোষিত এবিটি সদস্যরা হচ্ছে- শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী (১), সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী (২), সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস। এদের মধ্যে শরিফুল ও সেলিমের এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে এবং বাকিদের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

ডিএমপি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ জঙ্গি হামলায় নিহত নীলাদ্রি নিলয়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় এবং সাভারে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা ও রাজধানীর লালমাটিয়ায় আহমেদ রশিদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্তে তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে খুনিদের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

সূত্রঃ বাংলামেইল

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে