বিশেষ প্রতিনিধি, আব্দুল মান্নান, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬নং কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সীট রাজীব মৌজার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের কন্যা সূর্য্যি আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের ভুয়া নাতনীর ( ওয়ারিশ) পরিচয় সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১৬ সাল থেকে সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরি করে আসছেন। যে প্রত্যয়নপত্র মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন দিয়েছেন এবং সেই সময়ে ০৮/১২/২০১৫ইং তারিখে ৬নং কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মরহুম আসাদুর রহমান বাবুল কর্তৃক সূর্য্যি আক্তারকে মুক্তিযোদ্ধার নাতনী হিসেবে প্রত্যযনপত্র দেন। যা গত ২০২০ সালে জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া নাতনীর পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মোছাঃ সূর্য্যি আক্তার, সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৮নং গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের খামার গাড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করছেন মর্মে খবরটি প্রকাশিত হয়।

ঘটনাটি অনুসন্ধানে জানা যায়, মোছাঃ সূর্য্যি আক্তার, কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬নং ইউনিয়নের ৪ নম্বর সীট রাজীব গ্রামের জাহেদুল ইসলামের কন্যা। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তার স্ত্রী হাসনা বেগমের জন্ম তারিখ ০২/০৫/১৯৬৮,বড় মেয়ে মর্জিনা বেগমের জন্ম ১৬/০৪/১৯৭৪। মা হাসনা বেগম এবং মেয়ে মর্জিনা বেগমের বয়সের পার্থক্য ৬ বছর প্রায়। ৬ বছর বয়সে কোন মেয়ের সন্তান জন্ম দানের নজির নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন জানান, তার বড় মেয়ে মর্জিনা বেগম বিবাহের পর মারা যায়। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের কোন মেয়ে মারা যায়নি এবং জাহিদুল ইসলাম,পিতা- মৃত তফেল উদ্দিন, গ্রাম সিট রাজিব এর সাথে মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দনের কোন মেয়ের বিয়ে হয় নাই। সীট রাজিব ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও ৬নং কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর ১৩-/১০/২০২০ইং তারিখের দেওয়া ওয়ারিশন সনদে মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের মর্জিনা বেগম নামে কোনো মেয়ের নাম উল্লেখ্য নাই। তবে উক্ত চেয়ারম্যান ও মেম্বার ২৪/১০/২০২০ তারিখে দেওয়া ওয়ারিশন সনদে তার ছেলে, মেয়ে,নাতি ও নাতনীসহ ১৯ জনের নামের তালিকার ২ নম্বর ক্রমিকে মর্জিনা বেগমকে মৃত কন্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে। অপরদিকে ১৩/১০/২০২০ইং তারিখে ৪ নম্বর সীট রাজিবের মেম্বার ও ৬নং কিশোরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া ওয়ারিশন সনদে মরহুম মোফাজ্জল হোসেন পিতা-মরহুম আবুল হোসেন, গ্রাম সীট রাজিব এর ওয়ারিশন পত্রে ৩ নং ক্রমিকে মোছাঃ মর্জিনা বেগমকে কন্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে। যাহাকে উক্ত ওয়ার্ডের মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ১৩/১০/২০২০ইং তারিখের দেওয়া মোঃ জাহিদুল ইসলাম এর স্ত্রী হিসেবে দেখিয়েছেন। স্থানীয় মানুষের তথ্য মতে মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে মোছাঃ মর্জিনা বেগম মহছেনাই জাহেদুল ইসলামের প্রকৃত স্ত্রী, যাহা উপজেলা নির্বাহী অফিসার,কিশোরগঞ্জ কর্তৃক গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্তসহ বিভিন্ন উপাত্তের ভিত্তিতে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সব তথ্য ও প্রমানে প্রতীয়মান হয় যে, মোছাঃ সূর্য্যি আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের নাতনী নহে। প্রকৃত পক্ষে
মোছাঃ সূর্য্যি আক্তার মরহুম মোফাজ্জল হোসেনের নাতনি। এ ব্যাপরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শরীফা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিস কর্তৃক গঠিত তদন্ত টিম সরেজমিনে ঘটনা তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে তা আমি জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করি। বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক তাঁর দপ্তরের এডিপিইও দ্বয়ের সমন্বয়ে তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত করেছেন এ মর্মে একটি পত্র পেয়েছি। কিন্তু সে পত্রের কোন কপি তিনি দেখাইতে পারেননি। নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসে গেলে, জেলা শিক্ষা অফিসার কে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানকার জেলা মনিটরিং অফিসারম, তারিখ হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তদন্ত রিপোর্ট ও জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক গঠিত তদন্ত টিম এর প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তাদের দুপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতার প্রমান মিলেছে যা প্রায়ই একই রকমের। এখন শুধু কিশোরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সূর্য্যি বেগমের ওয়ারীশনে মুক্তি যোদ্ধার প্রকৃত নাতনী কিনা তার সর্বশেষ রিপোর্ট না পওয়ায় এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া নাতনী সেজে সনদ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যম মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী নেওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় এলাকাবাসী হতাশা প্রকাশ করেছে।

সমস্ত প্রমানাদির ভিত্তিতে সূর্য্যি আক্তারকে চাকুরীতে বহাল রাখা কিংবা চাকুরী চ্যুত করা হবে কিনা তা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য এলাকাবাসী দাবী জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে