ডেস্ক স্পোর্টসঃ বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে যান আবদুল হাই বাচ্চু। এর পরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্ট্রাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার দুই পরিচালকের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের তদন্ত টিম তাকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সেদিন ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা জানেন বলে স্বীকার করেন বাচ্চু।
তবে এর জন্য তিনি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম, তিন ডিএমডি ও তিন শাখা ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তিনটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন।
দুদকের নবনির্মিত জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছিলেন- ‘আমাকে পুনরায় বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব দেয়া হলে আমি ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধার করে দেব।’
তার এমন দাবিকে এক ধরনের ‘মশকারা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বাচ্চু বলেন, ‘আমার অনেক টাকার সম্পদ আছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তাই বেসিক ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করার প্রশ্নই ওঠে না।’
বাচ্চু বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতির ঘটনা আমি জানি। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পারি যে, বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। তখন আর কিছুই করার ছিল না।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ অনুমোদনে অনিয়মের ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি (বাচ্চু) সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি, তাই তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাচ্চুকে মামলার আসামি করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কে আসামি হবেন, কে হবেন না।’
আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। সবকটি মামলায় ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা ও শাখা ম্যানেজারদের আসামি করা হলেও বাচ্চু কিংবা পর্ষদের কাউকে তখন আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে দুদক। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
উচ্চ আদালত থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, বোর্ড সদস্যরা কেন আসামির তালিকায় নেই। তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ আসার পর দুদক থেকে সিদ্ধান্ত হয়, বাচ্চুসহ বোর্ড সদস্যদের আইনের আওতায় এনে তদন্ত করা হবে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদও বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। সে মোতাবেক বাচ্চুসহ এ পর্যন্ত ১০ পর্ষদ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করল দুদক। এর মধ্যে একজন সদস্য বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদকের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে জবানবন্দি দিয়েছেন। বলেছেন, বাচ্চুর প্রভাবে সব কিছু হতো। অন্য ৮ সদস্য বোর্ডের গাফিলতি বা দুর্নীতির ঘটনা এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধান শেষে ওই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১২৯ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।

 

 

 

J/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে