sosanko_monohor

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

বিডি নীয়ালা নিউজ( মে১৬)-  ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি’র প্রথম স্বাধীন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের শশাঙ্ক মনোহর। তিনি আইসিসি’র সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে তিনি দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হন। যদিও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আরেক ভারতীয় নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি আগামি দুই বছর এ পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। নিয়মানুসারে কোন ব্যক্তি একই সাথে বোর্ডের এবং আইসিসি’র সভাপতি থাকতে পারবেন না। এ কারণে আইসিসি’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার আগে মনোহর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)’র সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও তিনি সেটা স্বীকার করেন নি। তারপরও কারো বুঝতে এতটুকু অসুবিধে হয়নি বিসিসিআই সভাপতির পদ থেকে কেন পদত্যাগ করেছিলেন।

বিশ্বক্রিকেটের তিন মোড়ল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতেরদীর্ঢ়দিনের দাবির প্রেক্ষিতে আইসিসি সভাপতির ওপরে একজন চেয়ারম্যান মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৪ সালের ২৬ জুন ভারতের নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। যদিও এই পদে তার দুই বছর থাকার কথা থাকলেও তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন মাত্র ৫১৩ দিন। ২০১৫ সালে একাদশ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে তার হাত ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সে ম্যাচের ফলাফলের প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের আ হ ম মোস্তফা কামাল এ বছরই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার সে পদত্যাগকে গোটা দেশবাসী বাহবা দেয়। আ হ ম মোস্তফা কামাল সম্মানজনকভাবে বীরোচিত পদত্যাগ করলেও শ্রীনিবাসনের বেলায় সেটা হয়নি। এ বছরেই ২২ নভেম্বর তাকে আইসিসির চেয়াম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। যেটা তার জন্য কোনভাবেই সম্মানজনক ছিল না। আ হ ম মোস্তফা কামাল আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করায় এ পদে মনোনীত হন কিংবদন্তি ক্রিকেটার পাকিস্তানের জহির আব্বাস।

শশাঙ্ক মনোহর

শ্রীনিবাসন

জহির আব্বাস

এই পরিসরে আইসিসি নিয়ে সাম্যক আলোচনা করা যেতে পারে। বিশ্বক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল। ক্রিকেটকে আরো প্রাণবন্ত ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য এবং ক্রিকেট আইনকে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও সংশোধন করার লক্ষে ১৯০৯ সালে আই সি সি’ বা ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স এর জন্ম। ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (আইসিসি) এর জন্ম লগ্নে সদস্য সংখ্যা ছিল তিনটি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দ. আফ্রিকা ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ক্রিকেট সহ সব খেলা স্থগিত থাকে। বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিকেটকে আবার সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্বায়ন করার লক্ষে ১৯২৬ সালে ওয়েস্ট-ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারতকে আইসিসি’র সদস্যপদ দেয়া হয় ক্রিকেটকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ক্রিকেটের অগ্রগতি আবারও বিঘিœত হয়। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান এবং ’৮১ সালে শ্রীলংকা আই সি সি’র পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়ে এবং ২০০০ সালে বাংলাদেশ আই সি সি’র পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ায় এখন এ পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১০। আইসিসি সাধারণত তিন রকমের সদস্য পদ দিয়ে থাকে। যেমন:

(ক) পূর্ণ সদস্যপদ;

(খ) সহযোগি সদস্যপদ;

(গ) এ্যাফিলিয়েট সদস্যপদ।

আইসিসি’র পূর্ণ সদস্যপদ  পাওয়া দেশগুলোই কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারে। সহযোগি সদস্য দেশ সমূহের শীর্ষ দলগুলো ওয়ান-ডে, টি টুয়েন্টিসহ অন্য সব ক্রিকেট খেলতে পারলেও টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারে না। আই সি সি’র পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া সদস্য সংখ্যা ১০ হলেও সহযোগি ও এ্যাফিলিয়েট সদস্য মিলিয়ে এ সংখ্যা এখন দেড়শো ছাড়িয়েছে। সুতরাং আইসিসি পরিবারটা এখন ছোট তো নয়, বেশ বড়ই। তেমন একটি সংস্থার চেয়াম্যান বা সভাপতিকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সামলাতে হয়। বিশেষ করে এখন গ্লোবাল ক্রিকেটিংয়ের সময়ে তো বটেই। বিশেষ করে ক্রিকেট জুয়া, ম্যাচ গড়াপেটা, ছোট দলগুলোর বৈষম্যের স্বীকার হওয়া প্রভৃতি বিষয়গুলি সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়। এ সব সামলাতে হবে শশাঙ্ক মনোহরকে। যদিও এ কাজগুলো স্বাধীনভাবে করার জন্য তিনি আইসিসি’র গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তনও আনেন। ‘স্বাধীন চেয়াম্যান’ ধারাটিও তিনি যোগ করেছেন। কোন ব্যক্তি একই সাথে বোর্ডের এবং আইসিসি’র সভাপতি থাকতে পারবেন না নিয়মটিও তার হাত ধরেই এসেছে। তিনি ক্রিকেটে বৈষম্য নীতিরও কট্টর বিরোধী। সবাইকে এক কাতারে সামিল করতে চান। তিনি বিশ্বক্রিকেটে তিন মোড়ল মানতেও নারাজ। তিনি ‘সবার জন্য ক্রিকেট’ নীতিতে বিশ্বাসী। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে ক্রিকেটের প্রতি আরো সম্পৃক্ত করতে নিরলস কাজ করতে চান। যদিও ভাবনা আর বাস্তব এক নয়। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। তার এই সদিচ্ছার প্রতি স্যালুট জানাই। সময় বলে দেবে কতটা তিনি করতে পারবেন। #

লেখক : ক্রীড়ালেখক, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সংগঠক

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে