মো: আসাদুজ্জামান পাভেল, ডিমলা (নীলফামারী) থেকে-  বে-সরকারী সংস্থা ল্যাম্প-প্লান পার্টনারশীপ শো-প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে বে-সরকারী সংস্থা ল্যাম্প’র সহযোগীতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে । প্রান্তিক দরিদ্র, হতদরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন মানুষের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এবং মাতৃ মৃত্যুর হার রোধ কল্পে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর যাবৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ল্যাম্প-প্লানের শো-প্রকল্প।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও সহযোগীতাকারী সংস্থা দায়িত্বে থাকা ল্যাম্পের উপজেলা সমন্বয়কারী ও টেশনিক্যাল অফিসারের সেচ্ছা চারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক উক্ত সংস্থার বেশ কিছু স্বাস্থ্য কর্মীদের অভিযোগে জানা গেছে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা টেশনিক্যাল অফিসার (টিসি) মোঃ নজরুল ইসলাম কর্মীদের প্রতি পক্ষপাত মূলক ও রুঢ় আচরণে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীরা চরম ভাবে বিপাকে পড়েছে। এ কারনে কাজের প্রতি অনিহা প্রকাশ করছে অনেকেই। ফলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবায় বিঘ্ন ঘটছে বলেও দাবী করেন এসব স্বাস্থ্য কর্মী। সূত্র ধওে জানা যায়, প্রকল্পটির কার্যক্রম একরকম দায়সারা ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন উক্ত টিসি বলে জানিয়েছেন কর্মরত কর্মীরা। ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে গোলে-মালে ঢিলে ঢালে নিয়ম-অনিয়মে। এ যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৩/৪টি কেন্দ্রে ল্যাম্প প্রকল্পের আওতায় ২ জন করে প্রশিক্ষিত সিএসবিএ স্বাস্থ্য কর্মী আবাসিকে থাকার কথা থাকলেও উক্ত টিসির পক্ষপাত মূলক আচরনে এখনও অধিকাংশ কেন্দ্রে সিএসবিএ স্বাস্থ্য কর্মীরা আবাসিকে থাকেন না। ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ও স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্পের শুরুটা ২০১৬ সালে হলেও প্রায় দেড় বছর পরে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে নিয়োগ পান ২০ জন ডিপ্লোমা ধারী ৬ মাসের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলে নিবন্ধনকৃত (সিএসবিএ) স্বাস্থ্য কর্মী। নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মীরা জানান, আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৬ হাজার ৫’শ টাকা বেতন ভাতার উল্লেখ থাকলেও সেখানে আমরা পাচ্ছি ৫ হাজার ৯’শ ৪৩ টাকা এই বেতন থেকেই আমরা যারা আবাসিক হিসেবে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রয়েছি তাদেরকে বিদ্যুৎবিল দিতে হয় মাসে অন্তত ৪ থেকে ৬’শ টাকা। এ সামান্য বেতন ভাতায় নিজেই চলা মুসকিল হয়ে পড়ে তাহলে সাংসারিক জীবনে পরিবারের জন্য কিছুই থাকে না। এ জন্য অনেক স্বাস্থ্য কর্মী এখনও আবাসিকে থাকেন না, থাকতে চানও না। ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোদমে এখনও চলছে না বলে মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে।
২০১৬ সালে ২ আগষ্ট উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৮৭ জন সিএইসডাব্লি¦উ (মহিলা) পদে স্বাস্থ্য কর্মী প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দেয়া হয়। উক্ত কর্মীরা মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায গ্রামে ঘুরে গর্ভবতী মা ও শিশুদের খোজ খবর প্রয়োজনে এফডাব্লিউসিতে রেফার করবেন। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা পর্ষদের সিজি ও সিএসজি কমিটির সদস্যদের নিয়ে মাসিক ত্রৈ-মাসিক ও বাৎসরকিক নিয়োমিত মিটিং এর মাধ্যমে সদস্যদে উদ্বুদ্ধ করে সিসিটিকে সচল,কার্যকর ও ফান্ড গঠনে সহায়তা প্রদান করবেন। কিন্তু তারা চোখে পড়ার মত কাজ তেমনটা করতে পারছেন না বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক সিএইচসিপিরা জানান ল্যাম্প-প্লান শো প্রকল্পের কার্যক্রমের আমরা কিছু বুঝি না। ২০১৬ সাল থেকে তারা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তাদের কার্যক্রমের তেমন কিছু নেই । চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একটি করে মোবাইল ফোন দিয়েছেন যার সিমটি আমরা নিজেরাই ক্রয় করেছি। তবে অক্টোবর মাস হতে ঐ সিমে ১’শ করে টাকা প্রদান করেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে সিএসডাব্লিউ (পুুরুষ) পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০ জনকে। তারা পায় ২ হাজার টাকা সম্মানী ও ২’শ টাকা সাইকেল মেরামত ব্যয়। এত অল্প ভাতায় তাদের জীবন যাপন অনেটা কষ্টসাধ্য। ফলে এ কাজের পাশাপাশি তাদেরকে পারিবারিক অন্যকাজে ব্যস্ত থাকতেও দেখা গেছে প্রায় সময়েই। কারণ হিসেবে এসব কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এত অল্প ভাতায় কি আর পেট চলে ? এ কারনেও প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে দায়সারা ভাবে বলে জানান তারা। সর্বোপরি প্রকল্পের উপজেলা টিসি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বেশ কিছু কর্মীও বাড়ীতে গিয়ে নিয়োমিত দাওয়াদ পালন করেন। ফলে ঐ সব স্বাস্থ্য কর্মীদের বিশেষ সুবিধাও দিয়ে থাকেন। ঐসব কর্মী নিয়োমিত এফডাব্লিউসি প্রকল্প অফিস কিংবা আবাসিকে থাকতেও হয় না। যখন ইচ্ছা তারা মাঠে যান না হলেও যান না। এসব কর্মীদের সংশ্লিষ্ট পিসিগণ তাদেরকে কিছু বললে তারা বলেন আমি টিসিকে জানিয়েছি। তাই আমার ব্যাপারে না আপনাকে চিন্তুা করতে হবে। খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে টিসি’র সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলা স্বাস্থ্যকর্মীরা ইতিমধ্যেই অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে বলেও প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা কারিগরি সমন্বয়কারী (টিসি) নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার কোন কর্মীকেই বিশেষ সুবিধা দেই না। তবে তিনি দু’একজনের বাড়ীতে দাওয়াদ পালনের কথা স্বীকার করে বলেন,যত কথা উঠেছে তা সম্পূর্ন সত্য নয়।

প্রকল্পের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নিবির পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গস্খহণ করলেও হয়ত প্রকল্পের উদ্দেশ্যে অনেকটাই সফল হবে বলে বিশ্বাস করেন স্বাস্থ্য কর্মী ও স্থানীয়রা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে