পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন আকসাদুদ জামান। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিপরীতে উল্টো ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেন তিনি।

গত বছরের ১৯ অক্টোবর রাজধানীর কাওলা এলাকায় ডিবি পরিচয়ে এক বিদেশগামী যাত্রীর কাছ থেকে ৫ হাজার ইউএস ডলার, ২ হাজার দেরহাম ও ২ হাজার টাকা, দু’টি ব্যবহৃত মোবাইলসহ কাপড়চোপড় ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এ ঘটনার তদন্তে ধারাবাহিকভাবে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ধরাছোয়ার বাইরে ছিলেন মূলহোতা এসআই আকসাদুদ জামান। অবশেষে প্রায় এক বছর পর বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, আকসাদুদ জামানকে আগেই বরখাস্ত করা হয়। ওই ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। পরবর্তীতে আমাদের তদন্তেই তার নাম বেরিয়ে আসে। তাকে গ্রেফতারে আমাদের আরও কিছু তথ্য দরকার ছিলো, এছাড়া এ ঘটনার সব আসামি এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।

যেহেতু তিনি বরখাস্ত হয়েছেন, শেষপর্যন্ত তিনি পালিয়ে রংপুরে চলে গিয়েছিলো। জানি না তার অন্যকোনো উদ্দেশ্য ছিলো কি না। শেষপর্যন্ত তাকে রংপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সকালে পৌনে ৭টায় ভুক্তভোগী বিদেশগামী টিকাটুলির বাসা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বের হন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাওলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস অটোরিকশার গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রোবাস থেকে দুইজন নেমে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ভুক্তভোগীকে তার লাগেজসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।

তাকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সঙ্গে থাকা ৫ হাজার ইউএস ডলার, ২ হাজার দেরহাম, ২ হাজার টাকা, দু’টি মোবাইলসহ কাপড়চোপড় ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। সকাল ৯ টার দিকে রামপুর স্টাফ কোয়াটার্স এলাকায় ভুক্তভোগীকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তিক সহায়তায় মো. মোশারফ হোসেন (৪৫), মো. সেলিম মোল্লা (৪২), মো. রিপন মোড়ল (৫৫), মো. আমির হোসেন তালুকদার (৫৬), মো. বিষ্ণু মিয়া সিকদার (২৫) ও মো. হাসান রাজাকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে হাসন রাজাসহ কয়েকজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওইসব জবানবন্দি পর্যালোচনায় জানা যায়, ডাকাতিতে সিআইডি ডেমরা জোনে কর্মরত বরখাস্ত হওয়া এসআই মো. আকসাদুদ জামান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তদন্তের একপর্যায়ে আকসাদুদ জামানকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, জড়িত আর একজন রয়েছেন, যিনি পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারদের মধ্যে একজন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যও রয়েছেন। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমরা সবগুলো বিষয়ই তদন্তে আনছি।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া এসআই আসাদুদ জামান ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তার নেতৃত্বেই ডাকাতি হয়েছিলো বলে স্বীকার করেন তিনি।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে