রাজনীতিতে খাদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজছে। বিশেষ করে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের হতাশা ভর করেছে। এ কারণে দলের হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রাজপথে সক্ষমতা প্রমাণ করা সাবেক ছাত্রনেতাদের মাঠে নামানো হচ্ছে।

২০২৩ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই নেতাদের আসন ভিত্তিতে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষত তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর কাজ করবেন তারা। এজন্য ওই নেতাদের ইতোমধ্যে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ও দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র মতে, একদিকে চেয়ারপারসন 

অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে থাকার কারণে সাংগঠনিকভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। আবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অতীতে যেসব নেতা এমপি-মন্ত্রী হয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, সেই নেতারা উপার্জিত সম্পদ রক্ষার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় রাখার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল এবং হারানো ভাবমূর্তি রক্ষায় সারাদেশে আসনভিত্তিক ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ‘ভাবা হচ্ছে’। এই ‘ভাবনা’র ‘সংকেত’ পেয়ে সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে কাজ শুরু করেছেন।

আসনভিত্তিক বিএনপির ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়া নেতাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন—শহিদুল ইসলাম বাবুল (ফরিদপুর-২), বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ (নোয়াখালী-৫), হাবিবুর রশিদ হাবিব (ঢাকা-৮), মামুন হাসান (ঢাকা-১৫), হাসান মামুন (পটুয়াখালী-৩), আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সেলিনা সুলতানা নিশিতা (নরসিংদী-৪), মোস্তফা খান সফরী (চাঁদপুর-৩), আমিরুজ্জামান খান শিমুল (ঝিনাইদহ-৩), হায়দার আলী লেলিন, কাজী মোক্তার হোসাইন (ভোলা-১), আব্দুল মতিন (নওগাঁ- ৪), আবু বকর সিদ্দিক (রাজশাহী-৫), জয়ন্ত কুমার কুন্ডু (ঝিনাইদহ-১), তাইফুল ইসলাম টিপু (নাটোর-৪), কামাল আনোয়ার আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), রাজিব আহমেদ (বরিশাল-৪), আকরামুল হাসান মিন্টু (নরসিংদী-৩), মোরতাজুল করিম বাদরু (কুমিল্লা-৮), নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-৪), আরিফা সুলতানা রুমা (পাবনা-৩), মামুনুর রশিদ মামুন (নোয়াাখালী-১), এজমল হোসেন পাইলট (নেত্রকোনা-১)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন অন্তত অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রনেতা নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে কাজ করছেন। তাদের দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই সংকেত দেয়া হয়েছে। এদের অনেকে জাতীয়ভাবেই আলোচনায় রয়েছেন। আবার অনেকে নীরবেই কাজ করে যাচ্ছেন।

বিএনপিতে ছাত্রদল নেতাদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে

শাখার সাবেক আহ্বায়ক ও বতর্মানে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রদল বিষয় নয়। যার যোগ্যতা, সক্ষমতা রয়েছে নির্বাচনে তিনিই বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেন।’

নাটোর-৪ আসনে নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওখানে আমার জন্ম। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। ওখানে আমার নতুন করে প্রস্তুতির কিছু নেই।’

ছাত্রদল থেকে উঠে এসে বর্তমানে বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি যেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেখানে সার্বিক বিবেচনা করে ছাত্রদল নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। যোগ্যতা বিবেচনায় রেখে ছাত্রনেতাদের সবক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।’

প্রায় একই রকম মন্তব্য করেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিএনপির তিনি বলেন, ‘যারা ছাত্রদলের রাজনীতি করেছেন তাদের অনেকেই পরবর্তীতে বিএনপি থেকে এমপি হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমিও নিজেও আছি। ভবিষ্যতেও এমন হবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়ে থাকে। নির্বাচনে মনোয়নের ক্ষেত্রে দলের মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। যেহেতু বড় দল, সে কারণে একই আসনে একাধিক প্রার্থী থাকে। দল বিভিন্নভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তার মেধা প্রজ্ঞা, জনপ্রিয়তা সার্বিক দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন প্রদান করে।’

jagonews24

অবশ্য বর্তমানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কেউ নেই জানিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেকদের দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে যত বেশি আনা যাবে, ততই দল শক্তিশালী হবে।’

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমিসহ বেশ কয়েকজন এমপি হয়েছি, আমি দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন কেউ নেই। সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে একমাত্র আমানুল্লাহ আমান প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। বিএনপিতে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের যত বেশি মূল্যায়ন করা হবে, বিএনপি ততো বেশি শক্তিশালী হবে।’

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, ছাত্রনেতা বলে আলাদা কোনো মূল্যায়ন নেই। দলের প্রতি আনুগত্য, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাসহ অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। রাজনীতিতে ‘অনেক কিছু ভাবতে হবে’ বলেও মত তার।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রনেতা বলে কথা নেই। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য যারা আছে, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা যার আছে, চারিত্রিক গুণাবলী ঠিক আছে কি-না, এমন অনেক বিষয় দেখা হয়। এছাড়া নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না, দলের দুঃসময়ে কার কী ভূমিকা ছিল সেটাও চিন্তার বিষয় আছে। দেখতে হবে দলের প্রতি তাদের যে আনুগত্য সেটা ঠিক আছে কি ন-, যোগ্যতা আছে কি-না। খালি তো ছাত্রনেতা বা আইনজীবী বলে কিছু নেই, সব মিলিয়েই বিবেচনা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের ভোট লাগবে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। এভাবে সবগুলো বিষয় বিবেচনা করা হবে। মেধা-পড়ালেখা, সততা, আন্দোলন সবকিছু মিলিয়ে বিবেচনা করা হয়। রাজনীতিতে তো অনেক কিছু ভাবতে হবে।’ এ বিষয়ে  বলেন, ‘বিএনপি সাবেক ছাত্রনেতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করে।’

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে