জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ চল্লিশ দিনের কর্মসূচীর তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে চরম দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারী টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। তালিকাভুক্ত স্বচ্ছল ব্যক্তিরা কোন প্রকার কাজ না করেই পকেটস্থ করছে মজুরীর টাকা। আর চেয়ারম্যান মেম্বাররা ভূয়া নামের মজুরী তসরুপ করছে ব্যাপকভাবে। এমনই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নে।

হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কাজের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করতে সরকারী কার্যক্রমের নাম হলো চল্লিশদিনের কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর আলোকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষদের বাছাইকরে ৪০ থেকে ৪৫ জনকে নিয়ে গ্রুপ করা হয়।

এই গ্রুপকে দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করার মাধ্যমে প্রতিদিন ৪ শ’ হিসেবে চল্লিশ দিনে মোট প্রায় ১৬ হাজার টাকা করে প্রতিটি সদস্য আর্থিক সুবিধা পায়। এই সুবিধার টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিতে চেয়ারম্যান মেম্বাররা ভুয়া নাম তালিকাভুক্ত করে সরকারী অর্থ তসরুপ করে চলেছে।

এই ক্ষেত্রে সরকারী নীতিমালা ভঙ্গ করে স্বচ্ছল ও কাছের লোক ও পরিচিত জনদের গ্রুপে নেয়া হলেও তারা কোন প্রকার কাজ না করেই প্রকল্প শেষে ১৬ হাজার টাকা পকেটস্থ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই এমন করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই স্বচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তির জন্য এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে চেয়ারম্যান মেম্বাররা। আর ভূয়াদের সম্পূর্ণ মজুরীই লুটে নিচ্ছে তারা।

খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের তালিকায় এমন ৩ জন স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম দিয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বার লুুুৎফর রহমান। এদের ২ জন হলো সলেয়াপাড়ার কুুুঞ্জ চন্দ্র রায়ের ছেলে হৃদয় চন্দ্র রায় (৩৫) ও কামিনী বর্মনের ছেলেঅনুকুুল বর্মন (৫২)। অন্যজন পলিপাড়ার আজিজার রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩২)।

এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট বাবুর ডানহাত আলামত হোসেনের বড় ভাই। যিনি একজন গ্রাম্য কবিরাজ ও জড়িবুটি ব্যবসায়ী। পার্শবর্তী রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।

তারপরও শুধু চেয়ারম্যানের লোক হওয়ায় তাকে চল্লিশদিনের কর্মসূচীতে নেয়া হয়েছে। তিনি এই কর্মসূচীর কোনরকম কাজই করেননা। তার নামে মজুরীর টাকা তুলে খাচ্ছে ছোটভাই আলামত হোসেন। তাছাড়া এই দুইভাই থাই লটারী জুয়ার এজেন্ট বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ।

আর হৃদয় চন্দ পেশায় একজন খৈ মুড়ি ব্যবসায়ী। যার ২০ শতক জায়গাজুড়ে বিশাল পাকা বাড়ী ও পাঁচটি বড় বড় গরু আছে। সেইসাথে দুই দোন কৃষিজমিও আছে। একইভাবে অনুকুল বর্মণের রয়েছে ৮ দোন কৃষি জমি ও পাকা বাড়ী।

এই দুইজন স্বচ্ছল ব্যক্তি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান পক্ষে কাজ করেছেন বিধায় তাদের চল্লিশদিনের কর্মসূচীতে নাম দিয়ে বিনা পরিশ্রমেই আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

এব্যাপারে ওয়ার্ডের মেম্বার লুৎফর রহমানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, উল্লেখিতরা চেয়ারম্যানের লোক তাই তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। কাজ শুরু তারা যোগ দিবে এবং নিয়মানুযায়ী কাজ করবে।

স্বচ্ছলদের জন্য কি চল্লিশদিনের কর্মসূচী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি নিরবতা পালন করেন। বার বার জিজ্ঞেস করায় তিনি জবাব না দিয়ে সংযোগ কেটে দেন। ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট বাবু এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সব মেম্বার করেছে বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে