কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মাদ আলী।
কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মাদ আলী।
বিডি নীয়ালা নিউজ(৪ঠা জুন ১৬)-আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মারা গেছেন কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মাদ আলি। ‘সর্বকালের সেরা’ বলে বিবেচিত এই বক্সার ফিনিক্সের একটি হাসপাতালে শুক্রবার ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

পরিবারিক মুখপাত্র জানান, শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলি। জন্মস্থান কেনটাকির লুইসভিলে আলির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হবে।

১৯৮১ সালে বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর থেকেই পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন তিন বারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন আলি। কয়েক বছর ধরে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মূত্রঘটিত সংক্রমণের জন্য হাসপাতালে আনা হয় তাকে।

গত এপ্রিলে মুহাম্মাদ আলি পারকিনসন সেন্টারের সহায়তার জন্য অ্যারিজোনায় আয়োজন করা ‘সেলেব্রিটি ফাইট নাইট-এ সবশেষ জনসমক্ষে এসেছিলেন আলি।

শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ

ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নামে জন্ম নেওয়া আলি বিখ্যাত হয়ে উঠেন ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে সোনা জিতে।

‘দ্য গ্রেটেস্ট’ ডাকনাম পাওয়া আলি ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে প্রথম বিশ্ব খেতাব জেতেন। পরে তিনি প্রথম বক্সার হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জেতেন।

১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার আগে ৬১টি পেশাদার লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতে জেতেন আলি। এর মধ্যে ৩৭টি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করেছেন তিনি। নিজে একবারও নকডআউট হননি।

‘শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ হিসেবে খেতাব পাওয়া আলি শুধু বক্সিংয়ের রিংয়েই দুর্দান্ত ছিলেন না, ম্যাচের আগে-পরে কথাবার্তাতেও ছিলেন পটু।

তিনি ছিলেন একজন মানবাধিকার কর্মী যিনি খেলা ও জাতীয়তার সীমা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

রোম অলিম্পিকের পর আলি পেশাদার জগতে পা রাখেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭, ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ ও ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ সাল তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।

প্রথম বিশ্ব শিরোপা জেতার পর তখনও ক্যাসিয়াস ক্লে নামেই পরিচিত আলি নেশন অব ইসলাম নামে একটি সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যাদের উদ্দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম বদলিয়ে রাখেন মুহাম্মাদ আলি।

১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করে দেশে সমালোচনার মুখে পড়েন আলি। তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীযে যোগ দিতে অস্বীকার করায় তার বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব ও বক্সিং লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়। পরের চার বছর আলি লড়াইয়ে অংশ নিতে পারেননি।

১৯৭১ সালে পক্ষে রায় আসার পর আলি রিংয়ে ফিরে বক্সিং ইতিহাসের তিনটি বিখ্যাত লড়াইয়ের অংশ হন।

নিউ ইয়র্কে ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে পরিচিত ম্যাচে পেশাদার ক্যারিয়ারে আলি প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পান জো ফ্রেইজারের কাছে।

১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর জায়ারের (এখন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কংগো) কিনশাসায় ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে পরিচিত লড়াইয়ে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের খেতাব পুনরুদ্ধার করেন আলি। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় ফ্রেইজারকে হারিয়ে প্রতিশোধও নেন তিনি।

১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিয়ন স্পিংক্সের কাছে পয়েন্টে হেরে খেতাব হারান আলি। অবশ্য বছরের শেষের দিকে প্রতিশোধ নিয়ে আবার তা পুনরুদ্ধার করেন।

১৯৮০ সালে ল্যারি হোমস ও ১৯৮১ সালে ট্রেভর বেরবিকের কাছে একতরফা হারে ক্যারিয়ার শেষ হয় আলির। তারপরই দেখা দিতে শুরু করে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ।

BN24

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে