এম ডি বাবুল: কক্সবাজারের চকরিয়া থানাধীন বিচ্ছিন্ন দুর্গম ছিলখালি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ বুলেট/কার্তুজ, সেনাবাহিনীর নকল ইউনিফর্ম, অত্যাধুনিক বাইনোকুলার ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারসহ ডাকাত দলের কাছে অস্ত্র ভাড়াদানকারী চক্রের ৭ সদস্যকে র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও মহেশখালী থানাসহ উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র ডাকাত দলের নিয়মিত তৎপরতার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার সশস্ত্র ডাকাত দলের সাথে জড়িত অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের অস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৫ জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ছিলখালির ঘরবসতিহীন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় অবস্থান করে একটি চক্র টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ডাকাত দলের নিকট আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী নিয়মিত ভাড়া দিয়ে থাকে। আরো জানা যায় যে, এক ঘন্টার পায়ে হাটা পথ ব্যতীত সেখানে যাওয়ার আর কোন স্থলপথ নেই। আশেপাশে ১/২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অপরিচিত কোনো মানুষ ঢুকলেই ডাকাতদের নিযুক্ত চেকারদের মাধ্যমে তাদের কাছে তথ্য চলে যায় এবং তখন তারা গা ঢাকা দিয়ে দেয়।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর সিপিএসসি এর একটি চৌকস আভিযানিক দল উক্ত চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতঃ গত ০৬ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ মধ্য রাতে লবণের বড় নৌকার পাটাতনে লুকিয়ে ডাকাতদের সেই আস্তানার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে সংযুক্ত একটি ছোট খালের মাধ্যমে আস্তানার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই র‌্যাবের আভিযানিক দল নৌকা থেকে নেমে সেখানে অতর্কিত অভিযান শুরু করে। উপস্থিত দুষ্কৃতকারীরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ও র‌্যাব সদস্যদের এরূপ কৌশলী অবস্থানের কারণে গুলি ছোড়ার কোন সুযোগ পায়নি। এ সময় চক্রটির ০৭ অস্ত্রধারী সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব। উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে ধৃত ব্যক্তিদের ও তাদের আস্তানা তল্লাশী করে সর্বমোট ০২টি ওয়ান শুটার এক নলা বন্দুক, ০১টি ওয়ান শুটার কাটা রাইফেল, ০১টি ওয়ান শুটার রাইফেল (এলজি), ০১টি এয়ার রাইফেল/গান, ০২ রাউন্ড মেশিনগান (এমজি) এর বুলেট, ১০ রাউন্ড রাইফেলের বুলেট, ১১ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, ৮৯ রাউন্ড এয়ার রাইফেল বল, ০১টি বড় রামদা, ০১ সেট সেনাবাহিনীর ভুয়া ইউনিফর্ম, ০১টি বাইনোকুলার, ০৮টি মোবাইল ফোন এবং ১০টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় ১। খায়রুল আমিন (৪৩), পিতা-মৃত সিদ্দিক, সাং-নলবনিয়া, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার, ২। মাহাবুব তৈয়ব (৬৪), পিতা-মৃত আব্দুস ছাত্তার, সাং-মধ্যম শিয়াপাড়া, থানা-ঈদগাঁও, জেলা-কক্সবাজার, ৩। নূর ইসলাম (৫০), পিতা-মৃত নজরুল মিয়া, সাং-আজিজ নগর, থানা-লামা, জেলা-বান্দরবান, ৪। মোঃ আব্দুল হাসিম (৩৫), পিতা-মৃত ডাঃ আব্দুল মোতালিব, সাং-দরগাহ পাড়া, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার, ৫। জুলফিকার আলী ভুট্টো (৪৮), পিতা-মৃত আব্দুর শুক্কুর, সাং-দক্ষিণ মেধাকচ্ছপিয়া, শান্তি বাজার, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার, ৬। মোঃ সেলিম (২৮), পিতা-মোঃ হোসেন, সাং-পূর্ব হাজীপাড়া, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার এবং ৭। শাহাব উদ্দিন (৩২), পিতা-মোঃ হোসেন, সাং-গর্জনতলী, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার বলে জানা যায়।

আটককৃত চক্রটি জানায়, তারা আটককৃত আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের আদলে তৈরী নকল ইউনিফর্ম, দেশীয় অস্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী মূলত বিভিন্ন ডাকাতদলের নিকট বিক্রয় এবং ক্ষেত্রবিশেষ ভাড়ায় প্রদান করে থাকে। এছাড়াও উদ্ধারকৃত মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে ক্রেতা ও ভাড়াগ্রহনকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে আসছে বলে জানা যায়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্যান্য আলামতসহ ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করা হয়েছে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে