ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় আবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে ইঞ্জিনিয়ার্স সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিএসএমই)-এর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৬ষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান তিনি সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের পবিত্র সংবিধান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবিলায় সবর্দা প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্য সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে।
‘কোন অশুভ এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেনো দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী কোর পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে আয়োজিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদউদ্দিন প্যারেডটি পরিচালনা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ইসিএসএমই প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং কর্নেল কমান্ড্যান্ট এবং কমান্ড্যান্ট অব দি ইসিএসএমই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

পরে প্রধানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০১৮’য় যোগদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর দৃঢ় পারিবারিক বন্ধনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমার দুই ভাই, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টস থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

তিনি বলেন, ছোট ভাই রাসেলের ইচ্ছা ছিলো বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। কৃতিত্বের স্মারকস্বরূপ এ প্রতিষ্ঠান জাতীয় পতাকা অর্জন করেছে। এই সেন্টারের রিক্রুট প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি রামু ও উখিয়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার ও মন্দির মেরামত প্রকল্পেও ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকা-ের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাসদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে সশ্রস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এ সময় তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাঁর সরকারের আশ্রয় প্রদানের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সাথে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করছে।

এ ছাড়াও সেনাবাহিনী সারাদেশে এমনকি দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতা দেখিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের উন্নয়নের প্রসংগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এ ৯ বছরে আর্থ-সামাজিক প্রতিটি খাতে আমরা যুগান্তরকারী উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মানুষ এখন উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে। দেশের অর্থনীতিকে আমরা শক্তিশালী করেছি। আমরা দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি।

বর্তমানে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪১ শতাংশ থেকে কমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬১০ ডলার হয়েছে। একই সময়ে রপ্তানী আয় ও বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, থ্র্রীজির পর ফোরজি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। খুব শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।

সরকার প্রধান বলেন, সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। সারাদেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, এতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অনেক দূরদূরান্ত থেকে কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ার সেন্টারের পুনর্মিলনীতে যোগ দিয়েছেন, এ জন্য আপনাদের জানাই ধন্যবাদ। আমার বিশ্বাস, আপনাদের অভিজ্ঞতা, দিক নির্দেশনা ও উপদেশ বর্তমান যুগের স্যাপারদের সততা, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত করবে। আনন্দ ও উৎসবমুখর পুনর্মিলনী, অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিরত সর্বস্তরের সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ আরো সুদৃঢ় করবে।

ইঞ্জিনিয়ার্স সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সকল অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফলভাবে আয়োজন করার জন্য তিনি কমান্ড্যান্টসহ এই সেন্টারের সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল হতে ৯ বছরে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছি। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছি আর্মার্ড ব্রিগেড, কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড। বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। এই বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নিয়ে সিএমএইচসমূহে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা সিএমএইচে যুক্ত হয়েছে যুগান্তকারী বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টার এবং ককলিয়ার প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি কেন্দ্র। ফলে সেনাসদস্যদের সাথে সাথে দেশের জনগণও আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

তাঁর সরকার সেনাবাহিনীর সকল পদবীর সৈনিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ তাদের বাসস্থান, মেস, এসএম ব্যারাক ইত্যাদি নির্মাণ করেছে এবং বেতন ও রেশন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদিও বৃদ্ধি করেছে- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কোরের রয়েছে গৌরবোজ্জল আত্মত্যাগের ইতিহাস। শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এই কোরেরই একজন সদস্য। আরও রয়েছেন লে. কর্নেল আব্দুল কাদির, যার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সে ইতোমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ও ডিভ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, আরই ব্যাটালিয়ন, ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ডিভ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

 

 

 

 

 

B/S/S/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে