নীলফামারী থেকেঃ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিকে যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি করায় এ কার্যক্রমকে স্থগিত করার দাবি তুলে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছে উপজেলার ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা। রবিবার লিখিত এই আবেদনের কোন সাড়া না পেয়ে ওই সব মুক্তিযোদ্ধারা আজ সোমবার ডাকযোগে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ প্রেরন করে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারী মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। এতে সভাপতি করা হয়েছে রেফায়েত হোসেনকে। অথচ ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তি বার্তায় তাহার কোন  নাম নেই। জেলা কমান্ডারের প্রতিনিধি হিসাবে কমিটিতে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হকের নাম থাকলে ভারতীয় তালিকায় তার নাম নেই। অথচ নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সুপারিশে কেফায়েত হোসেনকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিতে না থাকায় অর্থের বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করার পায়তারা করা হচ্ছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডিপুটি কমান্ডার গনেশ চন্দ্র রায় বলেন, তার ভারতীয় তালিকা নম্বর ৪১৩৯৫ ও লালমুক্তিবার্তার তালিকা নম্বর ০১৩১৫০৩০০১২। অথচ তাকেও এখানে মুল্যায়ন করা হয়নি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, তার নাম লাল মুক্তি বার্তায় থাকলেও তিনি যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারেননি। তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৮১জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২২ জনের ভারতীয় তালিকায় নাম রয়েছে। আর ৫৯ জনের নাম রয়েছে মুজিব বাহিনী, লাল মুক্তিবার্তা ও ১৯৯৬ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। নতুন তালিকার জন্য ১০৪ জন আবেদন করেছে। গত ১১ ফ্রেরুয়ারী থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরু করা হয়েছে। গত ২ দিনে ৫০জনের তালিকা যাচাই বাছাই করেছে কমিটি।
এদিকে অভিযোগকারীদের মধ্যে আব্দুল গনি (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৪১৪০৪ ও লালমুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১৫০৩০০০৫), মতিয়ার রহমান (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৪১৩৭৪ ও লালমুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১৫০৩০০৩৩) বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি তারা মুক্তিযোদ্ধা হতে আবেদন করেছে। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহিদী হাসান কমিটির সদস্য সচিব হলেও তিনিও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তার বদলে রয়েছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ ছাড়া কমিটির অন্যান্য সকল সদস্যদের নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তাই তারা যাচাই বাছাই স্থগিত করে নতুনভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দাবি করেন।

এ ব্যাপারে যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি রেফায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি যুদ্ধকালিন সময়ে আনছার বাহিনীতে চাকুরী করেছি। আমি একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু ভারতীয় তালিকায় আমার নাম নেই। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে নীতিমালা অনুযায়ী আমাকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি সর্ম্পকে নীলফামারী- ৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রতিনিধি ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মোজ্জাম্মেল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।  মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহিদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তার পরিবর্তে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমার বা ডিসি স্যারের করার কিছু নেই। আমি অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে