মাফি মহিউদ্দিন কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) থেকেঃ প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় থামছেনা বাল্যবিয়ে ।প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে ও নিকাহ রেজিষ্টার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় একের পর এক বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। ফলে কম বয়সে বিয়ের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সের নববধুরা। আর এ বাল্যবিয়ের বলি হচ্ছে সমাজের অসহায় গরীব শ্রেনীর অভিভাবকদের সন্তানরা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কুঠিয়ালটারী গ্রামের দিনমজুর বাবুল মিয়ার কন্যা মোনালিশা আক্তার ও বাড়ি মধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রোল নম্বর (৭) গত দুই সপ্তাহ আগে একই গ্রামের আমিনুর ইসলামের ছেলে শাহিনুর ইসলাম (২২)এর সাথে দু পরিবারের মধ্যে কথাবার্তার এক পযার্য়ে গভীর রাতে ২ লাখ টাকা দেন দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হয়।

বাড়ি মধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, বাল্য বিয়ের খবরটি জানাজানি হওয়ার পর মেয়েটির মা জিন্নাতআরা মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এতে করে মেয়েটির স্কুলে আসা বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে মেয়েটির পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
নিতাই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি মেয়েটির মা গভীর রাতে তাঁর পরিবারের লোকজনদের উপস্থিতিতে অত্যান্ত গোপনে বিয়েটি পড়িয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।

গত ১২ই মার্চ রাতে চাঁদখানা ইউনিয়নের চাঁদখানা আরাজি বাবুপাড়া গ্রামের কুলদা চন্দ্র রায়ের মেয়ে ও গাড়াগ্রাম আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ববিতা রানী রায়ের বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের উত্তর চাঁদখানা আখরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত নগেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে শৈলান চন্দ্র রায় (২৮)এর সাথে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ , স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ও পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের ম্যানেজ করে বয়স বাড়িয়ে জন্ম সনদ নিয়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন । আর কাজীরা বিয়ে নিবন্ধনের নকল বহিতে বিয়ে নিবন্ধন করেন।

এ ব্যাপারে চাঁদখানা ইউনিয়নের কাজী আব্দুল হামিদ, নিতাই ইউনিয়নের কাজী জিগার আলী তারা সকলেই তাদের বিয়ে নিবন্ধনের কথা অস্বীকার করেন।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের যাতে বাল্য বিয়ে না হয় সেজন্য আমি গ্রাম পুলিশ, ইউপি সদস্য সকলকে সজাগ থাকতে বলেছি। তারপর কিভাবে বাল্য হয় আমার জানা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেজবাউল হক চেীধুরী জানান, কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কম বয়সে বিয়ে মা ও শিশুর জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ন। অপাপ্ত বয়সে গর্ভধারন করলে পুষ্টিহীন ও কম ওজনের শিশু জন্ম হয়। এমনকি গর্ভপাতের সময় মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ২০১৭ সালের বাল্য বিবাহ আইনে ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বাল্য বিবাহ বন্ধের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাল্য বিয়ের নতুন আইন তফসিলভুক্ত না হওয়ার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না পারার কারনে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধির আশংক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া কোথায় বাল্যবিয়ের খবর আসলে সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়ে ব্যাবস্থা নেওয়া হয়।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে