দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। আজ মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭ জন। গতকাল ছিল ৪৫ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৮ জন কম মারা গেছেন।
এই পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ১২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এ দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন রোগী রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৫ হাজার ৯৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ১৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল গতকাল। ওইদিন ৩ হাজার ১৭১ জনের দেহে এই ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল। গতকালের চেয়ে আজ ১৯ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৯৯ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫৬৩ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৬ হাজার ৯৯৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বাধিক ১৫ হাজার ৯৬৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৬৪টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৩০১টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৬০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী রয়েছেন। মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের ১ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৫ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ১২ জন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন এবং সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে রয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১ হাজার ১২ জনের মধ্যে ৭৭ শতাংশ পুরুষ এবং ২৩ শতাংশ নারী।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৩৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৮ হাজার ২৪৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৮৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৭২৩ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২ টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে ৩ হাজার ১৫৬ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯ হাজার ১৮৩ জনকে কোয়ারিন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ৮৩ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারিন্টিনে আছেন ৫৭ হাজার ৭১১ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার ১শ’টি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৮টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮২টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩০৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১৩ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ১০১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১২ হাজার ৭৭৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৯ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৯২২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১১৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০৬ জন এবং এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৭৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৯ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ৯১৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৫৩৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৯৬ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।

BSSN

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে