shamsur-rahaman

ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের দিকপাল কবি শামসুর রাহমানের ৮৮তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে আলোচনা, নিবেদিত কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, কবি রবিউল হুসাইন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবং অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন । অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, কবি শামসুর রাহমান বাংলা কবিতার উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন। আবহমান বাংলার জনজীবন ও প্রকৃতির রূপময় বর্ণনায় যেমন তাঁর কবিতা ভাস্বর তেমনি আমাদের সাহিত্যিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাপচিত্র হয়ে আছে তাঁর কবিতাভুবন। মধ্যবিত্ত জীবনের একান্ত অনুভব-উপলব্ধিকে যেমন তিনি কবিতা করে তুলেছেন তেমনি সমষ্টি-মানুষের কণ্ঠকে ভাষা দিয়েছেন। তাই তাঁর জন্মদিন মানে বাংলাদেশের কবিতারই জন্মদিন। তাঁরা বলেন, শামসুর রাহমান বেড়ে ওঠার ইতিহাস আমাদের কবিতার অগ্রযাত্রারও ইতিহাস। কারণ রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে এদেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হলেও শামসুর রাহমানের কবিতাই আমাদের প্রকৃত ইতিহাসের বিশ্বস্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পর্যন্ত আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি বিন্দুকে স্পর্শ করে গেছেন। কবিতার সঙ্গে জনবিচ্ছিন্নতার অপবাদ শামসুর রাহমান একেবারেই ঘুচিয়ে দিয়ে গেছেন। স্বপ্নচারিতার সমান্তরালে তাঁর পা প্রোথিত ছিল বাংলার পবিত্র মৃত্তিকায়। এজন্য শামসুর রাহমান যেমন বারবার আমাদের স্মরণে আসবেন তেমনি থাকবেন আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন ও সংগ্রামে।
অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের পরিবারের ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান বলেন, শামসুর রাহমান যেমন পরিবারের একান্ত আপনজন ছিলেন তেমনি বাংলার মানুষও ছিল তাঁর বৃহত্তর ভালবাসার সংসার। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সবসময় ছিলেন অবিচল।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শামসুর রাহমানের কবিতায় প্রথম দিকে ত্রিশের কবিতার আবহ ছিল, কিন্তু ক্রমেই তিনি তাঁর মৌলিক কবিতার সুর প্রতিষ্ঠা করে বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। পাকিস্তানপর্বে জারি হওয়া সামরিক শাসন যখন বাঙালির মৌলিক অধিকার হরণ করতে শুরু করে তখন শামসুর রাহমান কবিতার অক্ষরে অক্ষরে বাঙালির নিজস্বতার কথা বাক্সময় করে তুলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ভিয়েতনামের যুদ্ধ পর্যন্ত তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু হয়েছে অবলীলায়। মানুষের শুভ ও কল্যাণের কথা কবিতায় কী করে উচ্চারণ করতে হয় শামসুর রাহমানের কবিতা তার উদাহরণ হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
আবৃত্তিতে আরও অংশ নেন লায়লা আফরোজ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং তামান্না সারোয়ার নীপা।
শামসুর রাহমানকে নিবেদিত কবিতাপাঠে অংশ নেন- কবি কাজী রোজী, সাযযাদ কাদির, রবীন্দ্র গোপ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বদরুল হায়দার, পিয়াস মজিদ, এম আর মনজু, রনজু চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন চাষা প্রমুখ। সংগীত পরিবেশ করেন শারমিন সাথী ইসলাম ও সুমা রায়।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে