ramadan

রমজান ইবাদতের বসন্তকাল। তাই রমজানকে বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। সাহরি, ইফতার, রোজা, তারাবি, তেলাওয়াত ছাড়াও রয়েছে ইতিকাফের বিধান। ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। ইসলামের পরিভাষায়, সাওয়াবের আশায়  মসজিদে অবস্থান করার নাম ইতিকাফ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২১১) পবিত্র কোরআনে ইতিকাফ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে : ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫) অন্য আয়াতে এসেছে : ‘যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করবে, ততক্ষণ স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এটা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমানা। সুতরাং তোমরা এর কাছেও যেয়ো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ পুরো মহল্লার কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে। আর একজনও যদি আদায় করে, তাহলে সবাই রেহাই পাবে। এই ইতিকাফের জন্য রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। আর ঈদের চাঁদ উদিত হলে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। তবে ঈদের নামাজ আদায় করে বের হওয়া উত্তম। কেননা এতে ঈদের রাতে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত করা যায়। মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩) ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য শবেকদরের অনুসন্ধান। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পছন্দ করে, সে যেন ইতিকাফে বসে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৪) ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরাহ পালন করার সাওয়াব দান করা হবে।’ (বায়হাকি : ৩/১৪৯) ইতিকাফের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকে। ইতিকাফকারী শবেকদরের তালাশে থাকে। ইতিকাফের ফলে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। আল্লাহর জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে। ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। মসজিদে ইতিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে, আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভব হয়। মসজিদে ইতিকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে ইতিকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। এ ছাড়া ইতিকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতের সুযোগ হয়। ঐকান্তিকভাবে তাওবা করার সুযোগ লাভ হয়। তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়। সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।

 

লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা –

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে