ডেস্ক রিপোর্ট : সর্বশেষ ২০১৫ সালের শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘ সংখ্যা ১০৬। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এরপরের সময়ে নিশ্চিতভাবেই কমেছে বাঘের সংখ্যা। উদ্বেগজনকভাবে বাঘের এই সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।বাংলা দৈনিক সমকালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে ওই পাঁচটি কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চোরা শিকারিদের বাঘ শিকার, লোকালয়ে আসা বাঘ পিটিয়ে হত্যা, বাঘের বার্ধক্য, লবণাক্ত পানি পানে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়া আর ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়া।

এসব কারণে বাঘের মৃত্যু রোধে সরকারি বেসরকারি নানা প্রকল্প চলমান থাকলেও কাজে আসছে না তা। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে বাঘের সংখ্যা। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে তথ্য অনুযায়ী ২০০১ থেকে গত ১৬ বছরে বিভিন্ন কারণে মারা গেছে ৪২টি বাঘ।

এই সময়ের মধ্যে পিটিয়ে বাঘ মারা হয়েছে ১৬টি। চোরা শিকারিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৮টি, অসুস্থ ও বার্ধক্যজনিতকারণে মারা গেছে ১০টি আর ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছে ১টি বাঘ। এসবের বাইরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে উদ্ধার হয়েছে ১০টি বাঘের চামড়া।

গত কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাঘের চামড়া হাড়সহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের দাম কয়েকগুন বেড়েছে এমন দাবি করেছেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। তিনি বলেন বনদস্যুরা আগে জেলে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করলেও এখন বাঘ শিকারে নেমেছে। ফলে কমছে বাঘের সংখ্যা।


সুন্দরবনে এভাবে মুক্ত চলাফেরা করা বাঘের সংখ্যা কমেছে। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের লবণাক্ত পানির উচ্চতা বাড়ছে। ফলে কমছে বাঘের বিচরণভুমি। পাশাপাশি মিষ্টি পানির অপ্রতুলতায় লবণাক্ত পানি পানে বাধ্য হচ্ছে বাঘ। আর তাতে লিভার সিরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়ছে তারা। এ ছাড়া নির্বিচারে বন উজাড়, অপরিকল্পিত পর্যটন ও বনের মধ্য দিয়ে ভারি নৌযান চলাচলের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাঘের বংশবৃদ্ধির ওপর।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গত কয়েকবছরে আটক হয়েছেন বেশ কয়েকজন চোরা শিকারি। তারা জানিয়েছেন বাঘ শিকারে তারা বিষ মেশানো হরিণ বা ছাগলের মাংস ব্যবহার করে তারা। এছাড়া গুলি করে বা ফাঁদে ফেলেও হত্যা করা হয় বাঘ।সুন্দরবণের অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসায় খুলনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার’। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে ৪৯টি ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করা হলেও খাবার সংকটে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ছয় হাজার ১৭ কিলোমিটার আয়োতনের সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘ ছিল ৪৫৩টি, ২০০৪ সালে ৪৪০টি এবং ২০১৫ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬টিতে।এমন পরিস্থিতিতে ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ রক্ষা করব’ শ্লোগানে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।

প্রি/ক/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে