ডেস্ক রিপোর্ট : একটু বৃষ্টি হলেই মিরপুরের কালশী রোডে পানি জমে যায়। ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে দুই পাড়ে। তখন চরম ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। মিরপুরের বাউনিয়া খাল এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম। কালশী সড়কসংলগ্ন সাংবাদিক খাল, প্যারিস খাল, বাইশটেকী খাল ও মাটিকাটা খাল থেকে আসা পানি বাউনিয়া খাল হয়ে তুরাগ নদে চলে যায়। কিন্তু দখলের কারণে সাংবাদিক খালের পানি এখন আর বাউনিয়া খালে যেতে পারে না। কাগজে-কলমে যেখানে খালের প্রস্থ ১৪ ফুট, সেখানে বর্তমানে তা ৩ থেকে ৪ ফুটের সরু নালা হয়ে গেছে। এ সরু নালাও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। আর মদিনাবাগ এলাকায় গিয়ে খালের মধ্যে গড়ে উঠেছে পাঁচতলা বাড়ি। এ কারণে পানি অপসারণের কোনো সুযোগ নেই। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই কালশী সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। শুধু এই খাল নয়, এভাবে প্রভাবশালীরা রাজধানীর বেশির ভাগ খালই দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে যে ড্রেন রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আর যে ড্রেন আছে তাও মাটি-বালুতে পরিপূর্ণ থাকে। এ কারণে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পানি অপসারণে অক্ষম হয়ে যায় ড্রেনগুলো। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রেনের অব্যবস্থাপনা ও খাল দখল হয়ে যাওয়ায় রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে একটি সমন্বিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নতুন মাস্টারপ্লানের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা ওয়াসার হিসাবে নগরীতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। বেশির ভাগ খালের সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদীর সাথে। সূত্রাপুর লোহারপুল হয়ে বুড়িগঙ্গা, মোহাম্মদপুরের বসিলা হয়ে বুড়িগঙ্গা, উত্তরার আবদুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, উত্তরখান হয়ে তুরাগ, খিলতে ডুমনি হয়ে বালু ও মানিকনগর হয়ে শীতল্যা নদীর সাথে সংযোগ ছিল খালগুলোর। তবে সেসবই এখন অতীত। আবদুল্লাহপুর খালটি হরিরামপুর, রানাভোলা, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, দলিপাড়া হয়ে বাউনিয়ায় তুরাগ নদে মিশেছে। রাস্তা ও রাজউকের প্লটের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্ত দখল করা হয়েছে ময়লা ফেলে। সেখানে প্লটও তৈরি করা হয়েছে। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের দণি পাশ দিয়ে বহমান খালটি এখন পুরোপুরি নর্দমা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের মাণ্ডা খাল সবুজবাগ থেকে শুরু হয়ে মাদারটেক, দণিগাঁওয়ের পাশ দিয়ে বালু নদীতে মিশেছে। দীর্ঘ দিন ধরে এটি ওই এলাকার পয়ঃনিষ্কাশনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃর হচ্ছে। তবে দখল-দূষণে অনেক আগেই সঙ্কুচিত হওয়া খালটি এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। খাল কিভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন হলো, তার কূলকিনারা বের করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা মোহাম্মদপুরসংলগ্ন বসিলা খালটি ও খালসংলগ্ন জলাশয় এবং বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাড় ভূমিদস্যুরা ইতোমধ্যে দখল-ভরাট করে নিয়েছে। সেখানে এখন সাইনবোর্ড আর ইটের ব্যারিকেড। নদী, খাল, জলাধারগুলো উদ্ধারে সরকারি তৎপরতা শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। শাস্তি পাচ্ছে না দখলকারীরা। এক যুগ আগেও শাহবাগ থেকে বড় মগবাজার পর্যন্ত পরীবাগ খাল, বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত আরামবাগ খাল ছিল। সময়ের ব্যবধানে এ খালগুলো সড়কে পরিণত হয়েছে। রাজাবাজার খাল, ধোলাইখাল-১, ধোলাইখাল-২, শাহজাহানপুর খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল, দণিগাঁও-নন্দীপাড়া খাল, রাজারবাগ-নন্দীপাড়া খাল, নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল, বাউনার খাল এবং গোবিন্দপুর খাল এখন অস্তিত্বহীন।
কসাইবাড়ি খালটি বর্তমানে ড্রেন
উত্তরা আবাসিক এলাকা থেকে উত্তরখানের ভেতর দিয়ে টঙ্গী খালে গিয়ে পড়া কসাইবাড়ি খালটি বর্তমানে ড্রেনে রূপান্তর হয়েছে। মহাখালী খাল, বাসাবো খাল, কল্যাণপুর খাল, গুলশান ও ধানমন্ডির খালগুলো নালায় পরিণত হয়েছে। মেরাদিয়া ও গজারিয়া খাল এখন সঙ্কীর্ণ নালা। খাল দখল ও ভরাট করে খালখেকোরা প্লট বানিয়ে বিক্রি করছে। খাল উদ্ধারের নামে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ছোট-বড় অনেক অভিযান চালালেও কোনো কাজ হয়নি। এ ক্ষেত্রে দখলবাজদের উচ্ছেদের চেয়ে সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারী করার অভিলাষ থাকায় খালগুলো মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
কল্যাণপুরে খালের জায়গা দখল হয়ে আছে
সরেজমিন দেখা গেছে, কল্যাণপুর ‘চ’ খালের বেশ কিছু জায়গা দখল হয়ে আছে। রামচন্দ্রপুর খালের ২০০ মিটার অংশেই ৩০ ফূট জায়গা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। এ খালের মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন স্থানে ৬০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুট রয়েছে।
খিলগাঁও থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্ত খালের কোনো চিহ্ন নেই
খিলগাঁও-বাসাবো খালের খিলগাঁও ফাইওভারসংলগ্ন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সামনেই আরেকটি ফলক। কিন্তু খিলগাঁও অংশ থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্ত খালের কোনো চিহ্ন চোখে পড়ে না। খাল ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কিছু দোকান। এটি খিলগাঁওয়ের ভেতর দিয়ে বাসাবো হয়ে মাণ্ডা খালে গিয়ে মিশেছে। ওয়াসার নথিপত্রে খালটির প্রস্থ স্থানভেদে ১৬ থেকে ৩২ ফুট। বাস্তবে সেটা কোথাও পাওয়া যায় না। তিলপাপাড়া থেকে আমানুল্লাহ সুপার মার্কেট পর্যন্ত খাল ভরাট করে কিছু স্থানে পাইপ ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। উত্তরার দণি আজমপুর থেকে শুরু হয়ে কসাইবাড়ী হয়ে মোল্লারটেক গিয়ে শেষ হওয়া কসাইবাড়ী খালটিকে সাধারণভাবে বোঝার উপায় নেই। ছোট একটি ড্রেনে পরিণত হয়েছে খালটি। এ খালটির দৈর্ঘ্য আট হাজার মিটার এবং প্রস্থ ১০ থেকে ১২ মিটার নথিতে আছে। খালের শুরুর দিকে দণি আজমপুরের জামতলা নামক স্থানে প্রস্থ চার মিটার থাকলেও মোল্লারটেকে গিয়ে দুই মিটার পাওয়া গেছে। কল্যাণপুর ‘খ’ খাল কাগজে-কলমে ৪০ ফূট হলেও অনেক জায়গায় খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া সরকারি নথিতে ৬০ ফূট প্রশস্ত বাসাবো খাল এখন ৩০ ফুট, রামচন্দ্রপুর খাল ১০০ ফুটের স্থলে ৬০ ফুট, মহাখালী খাল ৬০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুট, দ্বিগুণ খাল ২০০ ফুটের বদলে ১৭০ ফুট, আবদুল্লাহপুর খাল ১০০ ফুটের বদলে ৬৫ ফুট, কল্যাণপুর প্রধান খাল ১২০ ফুটের বদলে স্থানভেদে ৬০ থেকে ৭০ ফুট, কল্যাণপুর ‘ক’ খালের বিশিল অংশ এখন সরু ড্রেন, রূপনগর খাল ৬০ ফুটের স্থলে ২৫ থেকে ৩০ ফুট, ইব্রাহিমপুর খালের কচুতেসংলগ্ন মাঝামাঝি স্থানে ৩০ ফুটের স্থলে রয়েছে ১৮ ফুট।
ঢাকা মহানগরীতে এক সময় ৫৪টি খাল ছিল বলে জানা গেলেও এখন সরকারি কাগজে-কলমে রয়েছে ৪৩টির নাম। তবে এগুলোর মধ্যে ২৬টি খাল ঢাকা ওয়াসা দেখাশোনা করে। তবে ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে এর মধ্যেও ১৩টি খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ ৫৪টি খালের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৩টি খাল কোনো রকমে টিকে আছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন) রেজাউল করিমের নেতৃত্বে গঠিত খাল দখল সম্পর্কিত ছয় সদস্যের কমিটির এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রাজধানীর খালগুলো ১০ হাজার ৫১৫ জন ব্যক্তি ও কিছু প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। তারা খালের শতকরা ৬০-৮০ ভাগ জমি দখল করেছে। এ ছাড়াও দখলবাজের তালিকায় রয়েছে সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানও। আবাসিক এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিছু জায়গায় খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এক সময় খিলগাঁও এলাকার সি ব্লকে জলাশয় ছিল। এর সংযোগ ছিল খালের সাথে। কিন্তু এ জলাশয় ভরাট করে প্রথমে টিঅ্যান্ডটির এক্সচেঞ্জ অফিস স্থাপন করা হয়। এরপর কিছু অংশ আবাসিক প্লট তৈরি করে বরাদ্দ দেয়া হয়। একইভাবে তিলপাপাড়ার পেছনের খালের বড় অংশ ভরাট করে খেলার মাঠ এবং কিছু অংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রামচন্দ্রপুর খালের ২০০ মিটার অংশেই ৩০ ফুট জায়গা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। সেগুনবাগিচা খালের ওপর দিয়ে রাস্তা করেছে সিটি করপোরেশন।
গত চার বছরে খাল দখলের মাত্রা বেড়েছে
গত চার বছরে খাল দখলের মাত্রা বেড়েছে। খাল দখল করার কৌশলগুলোও প্রায় অভিন্ন। শুরুতে স্রোতবাহী খালের পানিতে খুঁটি পুঁতে মাচান বানিয়ে শত শত বস্তিঘর বানানো হয়। এরপর ময়লা-আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট ফেলে ভরাট করা হয়। ছোট ছোট বাঁধ দেয়ারও নজির রয়েছে। একপর্যায়ে প্রভাবশালী মহল এগিয়ে যায়, গড়ে তোলে পাকা স্থাপনা। খাল-নালা দখল ও নিশ্চিহ্ন করার ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া রাজধানীজুড়ে শুরু হয়েছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, মতাসীনদের প্রচ্ছন্ন মদদে চোখের সামনে বিলীন হয়েছে এসব খাল। এর বিরূপ প্রভাবে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভোগেন নগরবাসী।
খালের মূল মালিক জেলা প্রশাসন হলেও এতদিন ২৬টি খালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খালগুলো পরিষ্কার করে বলে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। এ কারণে গত ১৬ জুলাই উত্তর সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজধানীর জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করা হয়। তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে খাবার পানি সরবরাহের প্রতিষ্ঠান ড্রেনেজের দায়িত্ব পালন করে না। এটি সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। তবে আমরা এখন খাল পরিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছি।
এ কারণে লিডিং এজেন্সি হিসেবে সিটি করপোরেশনকে খাল-ড্রেনের দায়িত্ব দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এখন থেকে নগরীর খাল ও ড্রেনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পালন করবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এ সময় খাল-ড্রেনের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও তিনি বলেন, খাল-ড্রেনগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। খালের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো ভাঙতে গেলে আবার আদালতের কাগজপত্র দেখানো হয়। ফলে ইচ্ছা করলেই খাল দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। এতে ইচ্ছে থাকলেই রাজধানীর জলাবদ্ধতার নিরসন দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে না।
গত বুধবার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে রাজধানী তলিয়ে যায়। মূল সড়ক থেকে অলিগলি কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি হয়ে যায়। বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটে পানি ঢুকে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। ওইদিন দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আর বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এখনো বেশকিছু সড়ক ও এলাকার রাস্তায় পানি জমে রয়েছে। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকা ও খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পানি অপসারণে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
জলাবদ্ধতা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই : স্থপতি ইকবাল হাবিব
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব নয়া দিগন্তকে বলেন, নগরীতে যে জলাবদ্ধতা হবে তা আমি ১৫ বছর আগেই বলেছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। বাসাবাড়ির মধ্যে আগে পানি মাটিতে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন বাড়ির পুরো এলাকা সিমেন্ট-বালি দিয়ে ঢালাই করে দেয়া হচ্ছে। এতে বৃষ্টির পানি মাটিতে যেতে পারছে না। ওয়াসা ড্রেন নিয়ে একটি মাস্টারপ্লান করেছে কিন্তু তা কাগজে-কলমেই। তারা যে বাস্তবায়ন করেনি এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, শুধু ড্রেনেজের মাস্টারপ্লান করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এ জন্য দরকার সমন্বিত প্লান। সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় সেগুলো খালে গিয়ে পড়ছে। এজন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে কঠিন বর্জ্য আর খালে গিয়ে পড়বে না। তা ছাড়া শহরের পানি ধারণের জন্য জলাভূমি ও নি¤œাঞ্চল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
খাল টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী পরিকল্পনা প্রয়োজন : অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান
খাল টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী পরিকল্পনার বিষয়ে জোর দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, খাল একবার কর্তৃপ উদ্ধার করে, তা আবার ভরাট করে দখল করা হয়। এভাবে উদ্ধার ও দখল পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। তাই শুধু খাল উদ্ধার করলে চলবে না, পাশাপাশি স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। খালের চারপাশে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা, ফুটপাথ তৈরি করতে হবে। এরপর চারপাশে গাছ লাগিয়ে এ পরিকল্পনাকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। এভাবে প্রতিটি খাল অনুযায়ী পরিকল্পনা করলে পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, খাল উদ্ধারে প্রয়োজন আন্তরিকতা, উদ্যোগ, বরাদ্দ ও স্বচ্ছতা। খালগুলো বাঁচিয়ে রাখতে শুধু ওপরের ময়লা পরিষ্কার করলে হবে না। এর তলদেশে জমে থাকা শক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেলে তা পানি ধারণ করতে পারবে না। আর খাল যদি পানি ধারণ করতে না পারে, তাহলে ড্রেনের পানি যাওয়ার জায়গা না পেয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। এ জন্য পরিকল্পনা করে খালের তলদেশ ড্রেজিং করতে হবে।
ডিএসসিসি এলাকার খালগুলো দখলমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি : মেয়র খোকন
ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় ছয়টি খাল রয়েছে। এগুলো পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। খাল দখলকারী কিছু কিছু অবৈধ স্থাপনায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে অবশ্যই পুরনো খালগুলো দূষণ-দখলমুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
জলাবদ্ধতায় নগর কর্তৃপক্ষের দায় বেশি : ওয়াসা এমডি
ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছেন, মহানগরীর জলাবদ্ধতার জন্য ওয়াসাকে দায়ী করে মেয়র সাঈদ খোকন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়, বরং এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষের দায় বেশি। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। তিনি নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, কাগজে-কলমে রাজধানীতে বর্তমানে ২৬টি খাল থাকলেও এর মধ্যে ১৩টির কোনো অস্তিত্বই নেই। এগুলো দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা খাল সরকারি খাস জমি এবং এর মালিক জেলা প্রশাসন (ডিসি)। তারা আমাদের ২৬টা খাল রণাবেণের দায়িত্ব দিয়েছে। যার মধ্যে ১৩টা খালের পাড় বাঁধাইসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি; কিন্তু বাকি ১৩টা খাল এক সময়ে নিচু জমি ছিল, যার ওপর দিয়ে পানি বইত। একটা সময় পর মানুষ এটাকে নিজের দাবি করে সেখানে বাড়ি বানায়। আমরা খালগুলোতে গিয়ে দেখি কোন কোন অংশে খালের চিহ্নই নেই। (সিএস/আরএস) দাগেও খালের কোনো চিহ্ন নেই। নতুন করে শিগগিরই পাঁচটি খালের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান ওয়াসার এমডি। রাজধানীর খালগুলোতে পানির প্রবাহ কম থাকার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প থেকে ওয়াসাকে দায়ী করার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকসিম বলেন, এটা কোনোভাবেই আমি সমর্থন করব না। কারণ খাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের এবং আমরা খালের ওপরের অংশের ময়লা পরিষ্কার করি। তবে খাল খনন করার মতো পর্যাপ্ত জিনিস আমাদের নেই। কিন্তু আমরা খাল খনন করে আসার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সলিড ওয়েস্টে খাল ভরে যাচ্ছে। এই সলিড ওয়েস্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এগুলোই পানিতে পড়ে পানির প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ওয়াসা এমডি বলেন, বর্ষা মওসুমে রাজধানীজুড়ে চলমান জলজট নিয়ন্ত্রণে মাস্টারপ্লান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করেছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ২০২৫ সালের মধ্যেই ঢাকা শহর শতভাগ স্যুয়ারেজ লাইনের আওতায় আসবে। আর তা হলে, যত বড় ধরনেরই বৃষ্টিপাত হোক না কেন, দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা পানি নিষ্কাশন করতে পারব।

ন/য়/দ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে