Vutto-02

বিডি নীয়ালা নিউজ(৩১জানুয়ারি১৬)- আসাদুজ্জামান সুজন (নীলফামারী প্রতিনিধি): প্রতিবন্ধিকতাকে জয় করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ভুট্টু (২৫)। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধি হয়েও হুইল চেয়ারে বসে এই দোকান ওই দোকানে মালামাল সরবরাহ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। কোন দোকানের মালামাল প্রয়োজন হলেই মিসড কল দিলেই সে ছুটে যায় সেই দোকানীর কাছে। তারপর তার চাহিদামতো পন্য সামগ্রী হুইল চেয়ারে এনে দেন। এছাড়া প্রতিদিন উপজেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া- মহল্লার দোকানে পন্য সরবরাহ করেন। এই কাজ করে প্রতিদিন ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টাকা আয় করছেন এবং সেই টাকায় চলছে তার জীবন।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা শহরের মুন্সিপাড়ায় এক ভাড়া বাসায় থাকেন ভুট্টু। ২৫ বছরের এই যুবক জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধি হলেও ভিক্ষার পথ বেছে নেননি। নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা এই অমিয় বানী বুকে ধারণ করে জীবনে প্রথম কাজ শুরু করেন এক চানাচুর ফ্যাক্টরিতে। কয়েক বছর কাজ করেন সেখানে। সামান্য মজুরীতে কাজ করার পর আলাদা কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে।

এ অবস্থায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে চলাচলের জন্য একটি হুইল চেয়ার মেলে তার ভাগ্যে। নেমে পড়েন দোকানে দোকানে পন্য সরবরাহের কাজে। মহাজনদের সাথে আলোচনা করে নেন সকালে মালামাল নেবেন আর সন্ধ্যার আগেই তার টাকা পরিশোধ করবেন। মানবিক বিবেচনায় বড় বড় দোকানের মালিকগণ রাজি হয়ে যান। তারা বাকিতে ডাল ভাজা, চানাচুর, হজমী, চকলেট, ঝুড়ি ভাজা, চিড়া ভাজা, চিপস, ললিপপসহ হরেক রকম মালামাল তাকে দিতে থাকেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এসব পণ্য সরবরাহ করে প্রতিবন্ধিকতাকে জয় করেছেন ভুট্টু।

ভুট্টুর বাবা মোস্তফা ও মা শাহনাজ বেগম অনেক আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিন ভাই ১ বোনের পরিবারে অন্যান্য ভাইয়েরা ভালো থাকায় কাজ করে সংসার চালায় এবং আলাদা খান। বোনের বিয়ে হয়েছে কিন্ত স্বামী ঢাকায় থাকেন। ফলে বোন ও বৃদ্ধ নানী নিয়ে ভুট্টুর সংসার। প্রতিদিনের সামান্য আয়ে অতিকষ্টে সংসার চলছে তার। এই আয় থেকে প্রতিমাসে বাসার ভাড়া গুণতে হয় ১ হাজার ৫শ’ টাকা।

প্রতিদিন সকালে ওঠে ভুট্টু পন্য নিয়ে ছুটে চলেছেন এই দোকান ওই দোকান। মাঝে মধ্যে তার মোবাইলে দেখে নিচ্ছেন মালামাল নেয়ার জন্য কোন দোকানী মিসড কল দিচ্ছেন কিনা। হুইল চেয়ারে বসে দোকানে দোকানে মালামাল সরবরাহ করাটা কতটা কষ্টের তা না দেখলে বুঝা যাবেনা। জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধি সৈনিক ভুট্টু ভুলে গেছেন বিয়ের কথাও। কারণ এ অবস্থায় তিনি ঝামেলা বাড়াতে চান না। পুজিপাট্টার অভাব ও দোকানদার বাকি ফেলার কারণে মাঝে মধ্যে তার হুইল চেয়ারের চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন বাড়িতে সকলকে উপোষ থাকতে হয়। থাকার জন্য একখন্ড জমি কেনার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই প্রতিবন্ধি ভুট্টুর।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে