action-aid

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৭ই এপ্রিল১৬)-অনলাইন প্রতিবেদনঃ সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনার পর তিন বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার। আর প্রায় ৫৯ ভাগ শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

আজ শনিবার প্রকাশিত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের ইতিহাসে ২০১৩ সালের সেই ভয়াবহ ভবন ধসে ১১৩৫ জনের মৃত্যু হয় আর আহত হন ২৪শ ৩৮ জন। এরপরই পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা ও কর্ম পরিবেশের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

কিন্তু ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে কারখানার পরিবেশ কতটা উন্নত হয়েছে? আর শ্রমিকরা কতটা নিরাপদ বোধ করছেন?

রানা প্লাজার ৫ম তলায় ফ্যান্টম কারখানায় কাজ করতেন মোসাম্মৎ নাজমা । দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনদিন আটকে থাকার পর জীবিত উদ্ধার হন। পোশাক কারখানায় কাজের প্রতি এখনো আতঙ্ক তার।

“তিনদিন আটকা ছিলাম। চিন্তাই করতে পারি নাই বের হবো। আব্বা নাই, মা আছে, ছোট ভাই ক্লাস টেনে পড়ে। লেখাপড়ার খরচ দেয়া লাগে। পরে পপুলারে কাজ নিলাম অফিস সহকারী হিসেবে। যখন আটকা ছিলাম নিয়ত করছিলাম, ভিক্ষা করা লাগলেও গার্মেন্টসে কাজে যামু না”।

rana-plaja2

সপ্তম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল কারখানায় কাজ করতেন রুনা আক্তার। সেদিন একটি হাত ভেঙে যায় তার। মুখের কিছু অংশ বাঁকা হয়ে যায়। তিনিও জানান, পোশাক কারখানায় আর কাজ করতে চান না। করার সামর্থ্যও নেই।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ‘রানা প্লাজা ধসের তিন বছর: পোশাক শিল্পের কি ধরনের অগ্রগতি’ এই জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরিতে মোট ১৩০০ জন অংশগ্রহণ করেন। আর মৃত শ্রমিকের পরিবারের ক্ষেত্রে ৫০০ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবীর বলেন, গবেষণার ফলাফল আশাবাদী করতে পারছে না। কারণ সমন্বিত কোন উদ্যোগ নেই।

“বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এত বড় একটি খাত। কিন্তু সে অনুসারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার, তাদের কর্মসংস্থানের পরিবেশ নিয়ে এখনো অনেক কাজ বাকি। সত্যিকার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে দিতে হবে”।

ফারাহ কবীর বলেন, এজন্য সমন্বয়টা খুবই জরুরি। যাতে আরেকটি রানা প্লাজার মত দুর্ঘটনা দেখতে না হয়।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কর্মী, বিজিএমইএর প্রতিনিধি, গবেষক, অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি, আইএলওর প্রতিনিধিসহ উন্নয়ন খাতের ব্যক্তিরা।

rana-plaja

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন হামিদা হোসেন বলেন, “শ্রমিকরা যা পেয়েছে বা পাচ্ছে তাকে আসলে ক্ষতিপূরণ বলা যাবে না।”

“আসলে কমপেনসেশন একটা লিগ্যাল শব্দ আছে যে, দায়বদ্ধতা কার? দায়বদ্ধতা তাদের, যারা কাজ দিয়েছে। হাইকোর্ট থেকে সিদ্ধান্ত আসা উচিত ক্ষতিপূরণ কতটুকু হবে? আমাদের আইনে খুব কম আছে , এটা মোটেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধরা যায় না”।

আলোচনায় আরও বলা হয়, শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে ভেঙ্গে ভেঙ্গে। ফলে এই টাকা তারা কাজে লাগাতে পারেনি।

তবে ইতিবাচক কিছু ব্যবস্থার মধ্যে, রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম আইন সংশোধন একটি বড় ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ পর্যন্ত নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৬৪। কিন্তু এই সংগঠনগুলো কতটা স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করছে সেটাও একটি বড় প্রশ্ন বলে জানানো হয়।

কারখানা পরিদর্শন ও প্রতিস্থাপন অধিদপ্তরের মহা-পরিদর্শক সাঈদ আহমেদ বলেন, “এখন পর্যন্ত ৪৮০৮টি ফ্যাক্টরির তথ্য এসেছে। এখন পর্যন্ত ৩৯ কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। ৪২টি আংশিক বন্ধ হয়েছে।”

বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ অন্যান্য কারখানার মালিকদের ওপর নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারছে? বিজিএমইএর সচিব ফজলুর রহমান বলেন, সব অ্যাক্টিভ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করা হয়েছে। সংস্কার কাজও ৬০-৭০ শতাংশ হয়ে গেছে। মালিকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে। তারা কমপ্লায়েন্স কারখানা করতে আগ্রহী।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক টিউমো পটিআইনেন বলেন, “এখনো অনেক কারখানায় সংস্কার দরকার। তাদের আরও উদ্যোগ নিতে হবে যাতে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে সেগুলোকে সমাধান করা যায় এবং ওইসব কারখানার কি করা দরকার তা-ও তাদের জানতে হবে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে এবং আইন প্রয়োগ করতে হবে”।

একটি জাতীয় ক্ষতিপূরণ কাঠামো করা, নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন. কারখানায় স্বাধীনভাবে সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করা সহ কয়েকটি সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে