আন্তর্জাতিক রিপোর্ট :তালেবানের তাড়া খেয়ে ১৯৯৬ সালে কাবুল ছাড়তে বাধ্য হওয়া আশির দশকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান মোজাহেদিনদের গুরুত্বপূর্ণ একাংশের নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার বিশ বছর লোকচক্ষুর অন্তারালে থাকার পর সরকারের সাথে তার দলের এক সমঝোতা চুক্তির প্রেক্ষাপটে সদলবলে কাবুলে হাজির হয়েছেন। খবর এএফপির।কয়েক শ গাড়ির এক বিশাল বহর নিয়ে হেকমতিয়ার বৃহস্পতিবার কাবুল হাজির হন। তার গাড়ি বহরটি রাজধানীর প্রধান সড়ক পথে যাবার সময় আরো কয়েক শ গাড়ি তার বহরে যোগ দেয়। গাড়িগুলোতে তার সমর্থকরা পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইছিল আর পশতু ভাষায় ‘সম্মানিত হেকমতিয়ার আপনাকে কাবুলে স্বাগত’ স্লোগান দিচ্ছিল।
কাবুলে ফিরেই গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গমন করেন এবং প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সঙ্গে করমর্দন করেন।
এর আগে শনিবার হেকমতিয়ার লাগমান প্রদেশে এক জনসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে প্রথম জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ করেন।
আফগানিস্তান থেকে যখন রুশ বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়, তখন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার হয়ে ওঠেন কাবুলের ক্ষমতা দখলের জন্য মোজাহেদিন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।যখন তালেবান এসে কাবুল দখল করে নিল, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে তার দলবলসহ কাবুল ছেড়ে পালাতে হয়।সহিংসতা ও হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল।
কিন্তু সরকারের সাথে শান্তিচুক্তির পর ২০ বছর বাদে বৃহস্পতিবার হেকমতিয়ার রাজধানী কাবুলে ফিরে এসেছেন।গত আট মাস আগে এই চুক্তি সই হয়। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী হেকমতিয়ারের অনুগত প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হবে।ফগানিস্তানের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির পটভূমিকতে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মতো একজন গোষ্ঠীনেতার ভূমিকা প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষকরা বলছেন আফগান সরকার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে তার প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কাজে লাগানোর জন্য। কারণ তালেবানের হামলায় সরকার খুবই চাপের মধ্যে আছে।সরকার আশা করছে, হেকমতিয়ার তালেবান কমান্ডারদের প্রভাবিত করতে পারবেন, যাদের অনেকে এক সময় তার পতাকার নিচে লড়াই করেছিলেন।
তবে হেকমতিয়ারের সমালোচকরা তার সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, আফগানিস্তানে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সামরিক শক্তির প্রতাপ অনেক আগেই স্তিমিত হয়ে গেছে।লেবানকে আলোচনায় বসার জন্য তার ডাকে কতটা সাড়া মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে যখন তালেবান বুঝতে পারছে যে আফগান সরকার তাদের হামলার মুখে যখন খুবই চাপের মধ্যে আছে।
সমালোচকরা আরও বলছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন করে হেকমতিয়ারের প্রবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।হেকমতিয়ারের সাথে এই আপোস মীমাংসা নিয়ে অনেক আফগানই অখুশি। সেটা নব্বুইয়ের দশকের গৃহযুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য।
তাকে অনেক ডাকেন কাবুলের কসাই বলে। গৃহযুদ্ধের সময় তার বাহিনী কাবুলের ওপর রকেট হামলা চালিয়েছিল, সেজন্যে কেউ কেউ তার নাম দিয়েছিলেন গুলবুদ্দিন রকেটিয়ার।আফগানিস্তানের ইতিহাসের ওই পর্বে কাবুলে যে ধ্বংস, হত্যা-লীলা চলেছে, তার জন্য দায়ী করা হয় গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ের হিজবুল ইসলামী দলকে। কাজেই সেই ধ্বংসলীলার স্মৃতি যাদের মনে আছে, তার হেকমতিয়ারের এই প্রত্যাবর্তনকে মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে